শিশুদের যৌন নির্যাতনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ধর্ষণের খবর তো প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় কিংবা টিভিতে দেখতে পাই আমরা। কিন্তু শিশুদের যৌন নির্যাতনের কথা শোনা মাত্রই তো শরীরের সব পশম একবার দাড়িঁয়েযায়।
আপনার শিশুর উপরও যে যৌন নিপীড়ন হবে না সেই বিষয়ে আপনি কখনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। প্রতিটি শিশুই যৌন নিপীড়নের ঝুঁকিতে থাকে। আপনার শিশু কখনো যৌন নিপীড়নের শিকার হবে না এমনটা আশা করে কিংবা ভেবে থাকলে তা আপনার শিশুর উপর যৌন নিপীড়নের আশঙ্কা কমাবে না, বরং যদি তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয় তখন তারা কীভাবে সাহায্য লাভ করবে সেই সম্পর্কে আপনার প্রস্তুতি থাকবে না। শিশু যৌন নিপীড়নের বাস্তবতা খুবই ভয়াবহ ধারণা, কিন্তু এটা এমন একটা ব্যাপার যা প্রত্যেক অভিভাবকের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এখনো পর্যন্ত অনেক দেশে অভিভাবক ও সন্তানদের মধ্যে যৌন বিষয়ে কথাবার্তা বলার সামাজিক প্রচলন একেবারেই নেই। কিন্তু এটাই যে সবচেয়ে ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িঁয়েছে।
জানেন কি, ২০১৫ সালে ডেইলি স্টারের করা এক জরিপে উঠে এসেছিল বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে শতকরা ৮৫ জনের বয়সই বিশের নিচে! তাহলে বুঝতেই পারছেন, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের হার আমাদের দেশে ঠিক কতটা বেশি।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা ৪৭৭। এদের মধ্যে সরাসরি ধর্ষিত হয়েছে ৩৫১ জন, যা গেল বছরের তুলনায় ১৫% বেশি। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে ৪৩ জন শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৭ জন, আর যৌন নিগ্রহের শিকার সাতজন।
তবে কথায় আছে না, পরিসংখ্যান সবসময় সত্য কথা বলে না, সেটি শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের বেলায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। ৪৭৭ জন শিশু না হয় মুখ ফুটে তাদের উপর যৌন নিপীড়নের কথা বলেছে এবং তাদের বাবা-মাও সেগুলো প্রকাশ্যে এনেছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এরচেয়ে দশগুণ বেশি শিশু সম্ভবত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, কিন্তু শিশুরা ভয়ে সেগুলো তাদের অভিভাবককে জানাতে পারে না, বা জানালেও অভিভাবকেরা লোকলজ্জার ভয়ে সেগুলো স্রেফ চেপে যায়।
শিশুরা কাদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়? মূলত পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা প্রতিবেশীরাই শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন চালিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের দ্বারা, শিশুরা কোনো বাসায় কাজ করলে সেখানের মালিক বা অন্যান্য কর্মচারী দ্বারা, স্কুলপড়ুয়া শিশুরা তাদের শিক্ষক বা স্কুলের বিভিন্ন কর্মচারী দ্বারা (মাদ্রাসার ছাত্ররাও) কিংবা বাসায় গৃহশিক্ষক দ্বারা শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি।
অনেকে হয়ত আরেকটি তথ্য জেনে অবাক হবেন যে, বিশ্বব্যাপী ২৩% শিশু আসলে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দ্বারা নয়, বরং অন্য কোনো শিশুর দ্বারাই হয়ে থাকে যৌন নিপীড়নের শিকার। এটি হয় মূলত যৌন শিক্ষার অভাবের কারণে।
শিশুর কাছে এটি কিন্তু নিছকই একটি খেলা এবং খেলার ছলেই সে আরেকটি শিশুর দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে যেতে পারে।
আসলে বাস্তবতা যে কতোটা নির্মম তার প্রমাণ আপনি একটু গভীরেই ভেবে দেখুন। বাস্তবতাকে তো অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করার উপায় নেই। ‘ধুর, আমাদের শিশুদের সাথে কখনও এগুলো হবে না’ বলে নিশ্চিন্তে থাকারও জো নেই কিন্তু আপনার!
আপনি যদি একজন সচেতন বাবা বা মা হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের শিশুর যৌন সুরক্ষার ব্যাপারে আপনাকে নজর দিতেই হবে। যদি না দেন, তাহলে কবে হয়ত আপনার শিশুই পত্রিকার শিরোনাম হবে যৌন নিপীড়নের শিকার হিসেবে। কিংবা কে জানে, আপনার শিশু হয়ত কারও দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে এসেও লজ্জা বা ভয়ে আপনাকে কোনোদিন সেটি জানাতেও পারবে না।
অথচ দুনিয়াকে ঠিকমত বুঝে ওঠার আগেই তার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে এ জগতের ভয়াবহতম নিষ্ঠুরতার। মানসিকভাবে সে হয়ত এতটাই বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বে যে কোনোদিন তাকে আর সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এক দুর্বিষহ মানসিক ট্রমা তাকে তাড়া করে ফিরবে জীবনভর।
তবে আসল কথঅ হলো, চাইলে কি বাবা-মা কিংবা শিশুর অভিভাবকগণ এসব বিষয়ে আগে থেকেই সচেতনতা অবলম্বন করতে পারেন না, যাতে করে তাদের সন্তানের সাথে কোনোদিন এমন কিছু না হয়? নিশ্চয়ই পারেন। শিশুর যৌন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাবা-মা বা অভিভাবকদের করণীয় রয়েছে অনেক কিছুই।
১. আপনার শিশুকে তার পুরো শরীরটি চিনিয়ে দিন এখনই। তাকে যেরকম তার হাত-পা, চোখ-কান-নাকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন একেবারে শৈশব থেকেই, ঠিক একইভাবে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন তার স্তন, শিশ্ন, যোনী ও পশ্চাদ্দেশের সাথেও এবং তাকে বুঝিয়ে বলুন যে, শরীরের এই বিশেষ অংশগুলো খুবই ব্যক্তিগত।
২. শরীর চেনানো সম্পন্ন হলে তাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন, শরীরের ব্যক্তিগত অংশগুলো ব্যক্তিগত এ জন্য যে, সেগুলো দেখার অধিকার একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর বাবা-মা ছাড়া আর কারোই নেই। এমনকি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া হলেও, বাবা-মায়ের অনুমতি বা পরামর্শ ছাড়া ডাক্তারের সামনে নগ্ন হওয়া যাবে না।
৩. এবার তাদের বলুন, শরীরের ব্যক্তিগত অংশগুলো অন্য কেউ যেমন দেখতে পারবে না, তেমনই ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না এবং কেউ ছোঁয়ার কথা বলতেও পারবে না। ছুঁতে পারবে না তা তো ঠিকই আছে, কিন্তু ছোঁয়ার ব্যাপারে কথাও বলা যাবে না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ক শুরুতে শিশুকে খেলার ছলে তার শরীরের ব্যক্তিগত অংশ ছোঁয়ার কথা বলে থাকে, এবং ক্রমশ নিজের লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবিত হয়।
৪. শিশুকে বলুন, নিজের শরীর নিয়ে কোনো গোপনীয়তা চলবে না। শরীরের ব্যক্তিগত অংশে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে লজ্জা না পেয়ে সাথে সাথেই সেগুলো যেমন বাবা-মাকে জানাতে হবে, ঠিক তেমনই কেউ যদি তাদের শরীরের ব্যক্তিগত অংশ দেখে ফেলে বা ছুঁয়ে ফেলে, সে বিষয়েও বাবা-মাকে অবগত করতে হবে।
৫. শিশুকে বলুন, অপরিচিত কেউ যেন তাদের ছবিও না তোলে। এই পয়েন্টটি দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। ভাবতে পারেন, শিশুর ছবি তোলায় কী এমন যায় আসে! আসলেই যায় আসে। পৃথিবী এখন বিকৃত মনস্ক পেডোফাইলে ভরে গেছে। কোনো ব্যক্তি হয়ত সরলমনেই আপনার শিশুর ছবি তুলে অনলাইনে আপলোড করল কিন্তু সেটি দেখে যে কোনো পেডোফাইলের জিভ লকলক করে উঠবে না বা সে আপনার শিশুকে কামনা করতে শুরু করবে না, সেই নিশ্চয়তা আপনাকে কে দেবে!
৬. শিশুকে শিখিয়ে দিন কীভাবে কোনো ভীতিপ্রদ বা অস্বাচ্ছন্দ্যদায়ক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। ধরুন কেউ হয়ত তার শরীরের ব্যক্তিগত অংশ দেখতে বা ছুঁতে চাইল বা তাকে জাপটে ধরল। তখন সে যেন দ্রুত ওই ব্যক্তির নাগালের বাইরে চলে আসার চেষ্টা করে এবং বিশ্বাসভাজন কাউকে এ ব্যাপারে অবগত করে। বাসার আশেপাশে হলে বাবা-মাকে বা স্কুলে হয়ত শিক্ষকদেরকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দেয়।
৭. শিশু একটু বড় হলে তার সাথে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলা শুরু করুন। তাকে কোনো একটি বিশেষ সাংকেতিক শব্দ শিখিয়ে দিন, যেটি সে বাসায় আসা কোনো অতিথির দ্বারা আক্রান্ত হলে ব্যবহার করে বাবা-মাকে অবগত করতে পারে বা বাইরে কোনো পাবলিক প্লেসে কারো দ্বারা আক্রান্ত হলেও অন্য কারো দৃষ্টি আকর্ষণ না করে কেবল বাবা-মাকে জানাতে পারে।
৮. শিশুর মনে সাহস জোগান, তার মনের ভয় দূর করুন। যৌন নিপীড়করা শিশুর সাথে অনাচার করার পর তাদেরকে ভয় দেখায় যেন সে এ কথা কারো কাছে প্রকাশ না করে, যদি প্রকাশ করে তবে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই শিশুকে বোঝান, বাবা-মা থাকতে তার কোনো ভয় নেই। নির্বিঘ্নে সে বাবা-মাকে সব কথা বলতে পারে।
৯. আপনি যদি ধারণা করে থাকেন যে আপনার শিশুকে কেউ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে স্পর্শ করলেই সে সেটি বুঝে যাবে, তা কিন্তু ঠিক নয়। বরং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে করা স্পর্শেও অনেক শিশুর মনে ভালো লাগা তৈরী হতে পারে, সে এটিকে একটি মজার খেলা বলে বিবেচনা করতে পারে। তাই তাকে ‘ভালো স্পর্শ’, ‘খারাপ স্পর্শ’ না শিখিয়ে, ‘প্রকাশ্য স্পর্শ’ ও ‘গোপন স্পর্শ’ সম্পর্কে শিক্ষা দিন। অর্থাৎ শরীরের কোন কোন জায়গায় সবার সামনে স্পর্শ করা যায়, আর কোন কোন জায়গায় তা করা যায় না।
১০. আপনার শিশুকে ভালো করে বুঝিয়ে দিন যে উপরের নিয়মকানুনগুলো সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এমনকি সমবয়সী কোনো বন্ধু, কাছের বড় ভাই-বোন বা প্রিয় আংকেল-আন্টি হলেও, তাদেরকে গোপন স্পর্শ করতে দেয়া যাবে না, বরং অতিসত্বর বাবা-মাকে সেটি জানিয়ে দিতে হবে।
একটি বিষয় না বললেই নয়, আপনার শিশুর সাথে ভরসা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনার শিশু আপনাকে কিছু বললো, আর আপনি সেটা বিশ্বাস না করে তাকে উল্টো আরো নানা প্রশ্ন করে ভীত করে তুললেন, তাহলে তার সাথে কিছু হলে সে আপনাকে তা জানানোর ব্যাপারে আগ্রহ হারাবে।
শিশুকে যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে যাবতীয় শিক্ষা প্রদানের পরও নিশ্চিন্তে থাকা চলবে না, বরং যতদিন না সে যথেষ্ট বড় হচ্ছে এবং নিজের ভালোমন্দ নিজে বোঝার ক্ষমতা অর্জন করছে, ততদিন পর্যন্ত যথাসম্ভব তাকে চোখে চোখে রাখুন, নিজ দায়িত্বে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
কী ভাবে শিশুরা যৌন নিগ্রহের শিকার হয় ?
১. পুরুষাঙ্গ দিয়ে যৌন সঙ্গম করা বা ধর্ষণ করা বা শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ বা বস্তু ব্যবহার করা,
২. শিশুদের অশ্লীল ছবি দেখানো বা অশ্লীল কিছু তৈরিতে ব্যবহার করা,
৩. শুধুমাত্র যৌন তৃপ্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও কিছু দিয়ে বা শরীরের কোনও অংশ দিয়ে শিশুদের শরীর স্পর্শ করা,
৪. যৌন তৃপ্তির জন্য যৌনাঙ্গ বা শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ শিশুদের দেখানো বা ইঙ্গিত করা,
৫. অন্যের যৌনক্রিয়া দেখে তৃপ্তি লাভ করার জন্য একাধিক শিশুকে পারস্পরিক সংসর্গে লিপ্ত করতে বাধ্য করা,
উত্তেজক এবং অশ্লীল মন্তব্য করা এবং যৌন উদ্দীপক অঙ্গভঙ্গি করা।
এই নিগ্রহের যে দিকটা সব চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ করে, তা হল নিগ্রহকারীরা শিশুদের সঙ্গে ভদ্র, ভাল ও স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করে। ফলে শিশুরা নিজেদেরই অপরাধী ভাবে এবং প্রত্যেককেই অবিশ্বাস করতে শুরু করে, এমনকী নিজেকেও।
এক জন শিশু পরিচিত এবং অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা অত্যাচারিত হতে পারে। এ ধরনের ঘটনার ৯০ শতাংশ শিশুদের পরিচিত ব্যক্তি দ্বারাই হয়। অত্যাচারী ব্যক্তি প্রথমে সম্পর্ক ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তার ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই খুব কাছের মানুষ এ ধরনের কাজ করে — যেমন বাবা, ভাই, সম্পর্কিত ভাই, কাকা, মামা, প্রতিবেশী। যখন নিগ্রহকারী পরিবারেরই লোক হয় তখন তাক বলে অজাচার। যে দিন থেকে সমাজ গঠিত হয়েছে, সে দিন থেকেই সমাজে যৌন নিপীড়ন রয়েছে। যৌনব্যবসার জন্য মেয়েদের বিক্রি করা, দেবদাসী ও যোগিনী প্রথার মতো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রথা যেমন এর উদাহরণ। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে এ সব ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গেছে শতকরা ৭৫ জন মহিলা শৈশব অবস্থায় যৌন নিপীড়নের শিকার। এদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলাই পরিচিত বা আত্মীয়দের দ্বারা এই নিপীড়নের শিকার। সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়ির প্রচলিত ধারণাটি অস্বস্তিকর সত্যকে এড়ানোর জন্যই তৈরি।
যে পুরুষেরা শিশুদের প্রতি এ ধরনের যৌন নিপীড়ন চালায় তারা তাদের স্ত্রী অথবা সঙ্গিনীদের সঙ্গে করার পাশাপাশি এটা করে, তাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে নয়। অনেকে যেমন মনে করেন, তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ, মোটেই তা নয়। এরা খুবই স্বাভাবিক এবং বিচিত্র প্রকৃতির। শিশুদের যৌন নিপীড়নকে তারা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে, এটা কোনও অন্যায় নয়।
কিছু কিছু পুরুষ মানুষ আবার লোকজনের সামনেই এই ধরনের ব্যবহার করে থাকে। শিশুরা এত ভয় পেয়ে যায় যে তারা কিছুতেই তাদের এই লাঞ্ছনার কথা বলে না। নিপীড়িতর বয়স কত এ কথা কেউ ভাবে না। অত্যাচারী সব সময় ক্ষমতাবান হয়, অত্যাচারীর ধূর্ততার কোনও থই পায় না নিপীড়িত। যে শিশুটির উপর অত্যাচার করা হয় তার কোনও ক্ষমতাই থাকে না তা প্রতিরোধ করার, বিশেষত যদি সেই অন্যায়কারী পরিবারের লোক হয়। এমনকী মায়েরাও ঘটনা জেনে প্রতিবাদ করতে পারেন না কারণ তাঁরা ক্ষমতাহীন। পরিবার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে অথবা তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না, এই ভেবে তাঁরা চুপ করে থাকেন। পরিবারের বড়রা ও বাবা-মা, এমনকী সমাজও পুরো ব্যাপারটাকেই উপেক্ষা করে অথবা অস্বস্তি এড়াতে পুরো ব্যাপারটাই অস্বীকার করে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের উপর এই অত্যাচারের ঘটনা কিন্ত্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়। সব রকমের শিশু নিপীড়নকে অস্বীকার করা এবং শিশুদের কল্পনা বলে মনে করে সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা, আজ আমাদেরই কটাক্ষ করছে।
শিশুরা ভীষণ সরল এবং অনুভুতিপ্রবণ। শিশুদের যৌনতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই থাকে না এবং এ ব্যাপারে তাদের কোনও ভাবাবেগও থাকে না। এমনকী যদি কেউ এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হয় তবুও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। এক জন যৌনকর্মীও ধর্ষিতা হতে পারেন সে ক্ষেত্রে আইন তার হয়েই কথা বলবে। এ ধরনের অত্যাচারিত শিশুদের দোষারোপ করে আমরা অপরাধীকে প্রশ্রয় দিই।
‘অনুমতি’ ছিল কি ছিল না, এই প্রশ্ন শিশুদের ক্ষেত্রে ওঠেই না। আইনানুসারে, ১৬ বছরের নীচে মেয়ের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করা মানে তাকে ধর্ষণ করা।
যখন শিশুরা নিগ্রহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে তখন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তাদের আত্মবিশ্বাসের উপর অনাস্থা প্রকাশ করা হয়। এই জন্য শিশুদের মনে অন্যায়বোধ জাগে এবং তারা নিজেদের দায়ী মনে করে। তারা ভাবে কোনও ভাবে হয়তো নিগ্রহকারীর প্রতি তাঁর আচরণেই এমন কাণ্ড ঘটেছে।
কমেন্টস করুন