সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, যেসব মায়ের ওজন বেশি হয়, তারা সন্তানের ওজন নিয়ে মোটেই খেয়াল রাখেন না।সমীক্ষা চালায় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির একটি দল। বেছে নেওয়া হয় এমন ২৩০ জন মহিলাকে, যাদের ওজন তুলনামূলক বেশি। সেখানেই দেখা গেছে, নিজেদের অতিরিক্ত ওজনের জন্য ওই মহিলারা হাজারো সমস্যায় ভুগলেও নিজের সন্তানের ওজন নিয়ে তারা মোটেই চিন্তিত নন। উল্টে বাচ্চাদের বেশি ওজনকে তারা স্বাভাবিক ওজন হিসাবেই ভাবতে ভালবাসেন।
সেন্ট লুইসের ব্রাউন স্কুল। সেখানকার ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী পড়ুয়াদের মায়েদের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকরা। সন্তানের খাদ্যাভাস, বাচ্চা বাড়িতে কী করে, অবসর কিভাবে কাটায় এই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরও দিতে হয় মায়েদের। এক্ষেত্রে যাদের সমীক্ষার আওতায় রাখা হয়েছে, সেই মা ও সন্তান দু’জনেরই ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি। রিপোর্টে দেখা দিয়েছে, মাত্র ২০ শতাংশ মা স্বীকার করেছেন তাঁর সন্তানের ওজন বেশি। আর নিজের সন্তানের অধিক ওজন নিয়ে চিন্তিত মাত্র ৩ শতাংশ মা। বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই নিজের সন্তানের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভাবতেই রাজি নন।
সন্তানের অতিরিক্ত ওজন (স্থূলতা) কমানোর পরামর্শ
শিশুদের স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া সারা বিশ্ব জুড়েই একটা উদ্বেগের বিষয়। অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া শিশুদের মাঝে ছোট থেকেই ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, লিভারে চর্বি জমে যাওয়া, হৃদরোগের মতো জটিল সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। শিশু অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে খাদ্যাভাস ও জীবনধারণে কিছু পরিবর্তন আনলে শিশুর স্থূলতা কমানো সম্ভব।
শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহী করতে হবে: যেকোন ধরণের শারীরিক ব্যায়াম ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে। সন্তানকে শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহী করে তুলতে হবে। রুটিন মাফিক ব্যায়ামের পাশাপাশি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজে শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহী করতে পারেন। যেমন, বিল্ডিংয়ে ওঠার সময় লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা স্বল্প দূরত্বে কোথাও যেতে গাড়ি ব্যবহার না করে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারে বেশি উৎসাহী করতে পারেন।
পারিবারিক খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে: পারিবারিক খাদ্যাভাসে একটা নিয়ম মেনে চলতে হবে। একদিন এক জায়গায় না খেয়ে খাবারের জন্য সবসময় একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করতে হবে। সেটা ডাইনিং টেবিল হলেই ভালো। সন্তানকে কেবল তখন খেতে দিতে হবে যখন সে ক্ষুধার্ত থাকে। খুব প্রিয় কোন খাবারের ক্ষেত্রে ক্ষুধা না থাকলে অল্প পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। বাসায় জাঙ্ক ফুড পরিহার করাই উত্তম। সবচেয়ে ভালো হয় তার সাথে খাওয়ার সময় সে যে খাবার খাবে সেগুলো অন্যরাও খেতে চেষ্টা করলে।
খাবার জায়গা থেকে টিভি দূরে রাখতে হবে: খাবারের জায়গা এমন কোন স্থানে রাখুন যার আশেপাশে টেলিভিশন নেই এবং সন্তানকে খাওয়ানোর সময় তার কাছ থেকে যেকোন ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে রাখতে হবে। মোবাইল, টিভি অথবা কম্পিউটার এইসব দেখতে দেখতে খাওয়ার ফলে বাচ্চারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলে। যেটা শরীরের স্থূলতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
খাবারে বেশি করে সবুজ শাক-সবজী ও ফলমূল যোগ করতে হবে: সবুজ শাক-সবজী ও ফলমূলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে কিন্তু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। সেজন্যই ফল ও শাক-সবজী ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাবারে বেশি করে ফল ও শাক-সবজী যোগ করতে হবে। তবে বাজারে পাওয়া ফলের জুস পরিহার করাই উত্তম। এইসবে কৃত্রিম চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় স্থূলতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মিষ্টিভুট্টা, কলাইজাতীয় সবজী ও মটরশুটি পরিহার করতে হবে।
তৃষ্ণা মেটাতে শুধু পানি খেতে হবে: অনেকেই সন্তানকে বিভিন্ন জুস বা অন্যকোন বেভারেজ পানিয় দিয়ে থাকেন। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। জুস কিংবা বেভারেজের পরিবর্তে বাচ্চাদের পানি দিতে হবে। আর তাছাড়া, সব সময় পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সন্তানকে হালকা ঠান্ডা পানি দেয়া যেতে পারে। ঠান্ডা পানি শরীরের ক্যালোরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো নিশ্চিত করতে হবে: বাচ্চাদের জন্য কমপক্ষে ১০ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। আর একটু বড় বাচ্চাদের কমপক্ষে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে দিতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমানো ও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা বাচ্চাদেরকে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাচ্চাদের নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
চিনি ও লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে: কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবার যেমন- বাজারে পাওয়া জুস, চকলেট, মিষ্টি বেভারেজ ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তার পরিবর্তে বাসায় ফলমূল খেতে দেয়া যেতে পারে। ফলে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি থাকে। যা শরীরে চিনির অভাব পূরণ করে ও ওজন কমাতেও সাহায্য করে। উচ্চ সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ী, টমেটো সস, প্রক্রিয়াজাত পনির, টিনজাত বিস্কুট ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন: আপনার সন্তানকে নিয়ে নিশ্চয়ই প্রায়ই ফাস্টফুড খেতে যাওয়া হয়? পরিবারের সবাই মিলে গ্ল্যামারাস ফাস্টফুডের জমজমাট দোকানগুলোতে কিচ্ছুক্ষণ সময় কাটাতে ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি? আপনার কারণেই বাড়ছে আপনার সন্তানের মেদভূড়ি। অথচ কত নিশ্চিন্তে মেয়োনেজের বোতলটা এগিয়ে দিচ্ছেন আপনার সন্তানকে। অথবা ডাবল চীজ বার্গার এর প্লেটটা এগিয়ে দিচ্ছেন সন্তানের সামনে।
আপনার সন্তানের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে আপনাকেও এড়িয়ে চলতে হবে ফাস্টফুড। সন্তান যতই জেদ ধরুক, তার কথায় পটে গিয়ে নিয়মিত ফাস্টফুডে খাওয়ার অভ্যাসটা ছেড়ে দিন। প্রথমে আপনার সোনামণিকে রাজি করাতে হিমশিম খেতে হবে। কিন্তু কিছুদিন গেলেই পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবেন আপনি। উচ্চমাত্রার ক্যালরিযুক্ত এই খাবারগুলো খাওয়া কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ালে আপনার সন্তানের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন সহজেই।
খেলার সুযোগ দিন: ইটের গাঁথুনির এই শহরে শিশুদের খেলার যায়গার কথা ভাবাটাও বিলাসিতা। কিন্তু বিষয়টা যখন আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্যের তখন সাতপাঁচ ভাবার সুযোগ থাকে না। সন্তানকে একটু খোলা যায়গায় খেলাধুলা করার সুযোগ দিন। প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত দুটো দিন খোলা মাঠে খেলার সুযোগ করে দিন তাকে। এতে খেলাধুলার ছলে কিছুক্ষণ ঘাম ঝরানো হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত মেদটাও কমবে।
চকলেটের বিকল্প ফল: ছোট শিশুরা মিষ্টি খাবার খেতে ভালোবাসে। আর তাই অভিভাবকরা আদর করে তাদের হাতে চকলেট তুলে দেন। আপনার সন্তানের যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে তাহলে আপনার সন্তানকে চকলেট জাতীয় খাবার কমিয়ে তাজা ফল খাওয়ান। সেই সঙ্গে কোমল পানীয় পরিহার করে ফলের জুস খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। এতে বেশ দ্রুত ওজনটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে আপনার সন্তানের।
একনাগাড়ে বসে না থাকা: আপনার সন্তান কী ঘন্টার পর ঘন্টা একই যায়গায় বসে কম্পিউটারে গেম খেলে অথবা টেলিভিশনের পর্দার দিকে তাকিয়ে কার্টুন দেখে? যদি আপনার সন্তানের এমন অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে জেনে রাখুন তার অতিরিক্ত মেদের এটা একটি অন্যতম কারণ। আর তাই একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে দেখলে তাকে নিয়ে একটু হেটে আসুন অথবা ঘরের ভেতরেই কোনো সহজ কাজ দিন যেটা করতে তাকে কিছুক্ষণ হাটাচলা করতে হবে। এতে আপনার সন্তানের অতিরিক্ত মেদের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে।
শিশুর অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য শিশুর বয়স ও তার শারীরিক ওজনের উপর নির্ভর করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ ও থেরাপি দিয়ে থাকেন। আপনার সন্তানের ওজন যদি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়, তাহলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গর্ভধারণের আগে-পরে মায়ের ওজন বৃদ্ধিতে সন্তানের স্থূলতা দেখা দেয়
গর্ভাবস্থার আগে ও পরে যে মায়েরা অতিমাত্রায় স্থূলকায় হয়ে পড়েন তাদের শিশুদের মাঝে পরবর্তীতে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। আমেরিকার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান নিউট্রিশন বিভাগের এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে নিউ ইয়র্কের নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের আফ্রিকান-আমেরিকান মায়েদের ওপর গবেষণা চালানো হয়।
প্রধান গবেষক এলিজাবেথ ওয়াইডেন বলেন, গর্ভাবস্থায় বা এর আগে মায়ের ওজন পরে শিশুর ওজনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে কিনা তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। তবে আমেরিকায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিষয়টি দেখা গেছে।
মাউন্ট সিনাই হসপিটালের আইকান স্কুল অব মেডিসিন এর গবেষক আন্দ্রিয়া ডিয়েরলিন বলেন, শিশুদের স্থূলতার সঙ্গে পরবর্তীকালের বহু সমস্যা জড়িয়ে থাকে। এই বিশেষজ্ঞ গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলেও জানান, শৈশবের স্থুলতা পরে টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ঘুমের সমস্যা বয়ে আনতে পারে।
এর আগের বহু গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন যে, যে মায়েদের ওজন বেশি থাকে তারা অন্যদের চেয়ে বড় আকারের সন্তান জন্ম দেন। এদের মাঝে খুব দ্রুত স্থুলতা দেখা দেয়।
ইউএস ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন (আইওএম) জানায়, স্বাভাবিক ওজনের নারীদের গর্ভাবস্থায় ওজন ২৫-৩৫ পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজনের নারীদের বাড়া উচিত ১৫-২৫ পাউন্ড আর স্থুলকায় নারীদের বৃদ্ধি পেতে পারে ১১-২০ পাউন্ড।
গবেষণায় ৭২৭ জন নারীর তথ্য নেওয়া হয়। তাদের গর্ভাবস্থার আগের এবং পরের ওজন তুলনা করা হয়। তবে অনেকেই আগের ওজনটির কথা ভুলে যান। তবে শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, এদের ২২ শতাংশ শিশু স্থূলকায় হয়েছে। এদের মায়েরা গর্ভে সন্তান আসার আগে ও পরে অনেক মোটা হয়ে গিয়েছিলেন।
তাই নারীদের গর্ভধারণের আগে ও পরে ওজনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। এ জন্যে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে, জানান গবেষকরা।[১]
স্থূলকায় শিশুর স্বাস্থ্যহীনতা
শিশু-কিশোরদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা ইদানীং বেড়েই চলেছে। স্থূলতা শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। অনেকের মনেই প্রশ্ন, শিশু অতিরিক্ত মোটা হয়ে যায় কেন? স্থূলতার কারণ মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন।
পারিবারিক কারণ: মা-বাবা বা পরিবারের অন্য কারও মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকলে শিশুও স্থূল হতে পারে। মায়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে বা মোটা হন, তাহলে নবজাতকের ওজন বেশি হয়। শৈশবে শিশুর ওজন বেশি থাকলে পরবর্তীকালে তারা মোটা হতে থাকে।
হরমোনজনিত কারণ: শরীরে কোনো হরমোনের তারতম্য হলে শিশু মোটা হতে পারে।
পরিবেশগত কারণ: এর মধ্যে রয়েছে শিশুর জীবনাচরণ- দৈনন্দিন কাজ, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রম ইত্যাদি।
শিশুর জীবনাচরণ ওজন বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এ জন্য আমরাই দায়ী। কারণ শিশুর খেলাধুলা বা মনোরঞ্জনের কোনো ব্যবস্থা রাখি না। স্কুল আছে, খেলার মাঠ নেই; অ্যাপার্টমেন্ট আছে, হাঁটার জায়গা নেই। অথচ শৈশবে একটি শিশুর জন্য খোলামেলা মাঠ, সাঁতার কাটার জন্য পুকুর যেমন প্রয়োজন, তেমনি দরকার তার হেঁটে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং বাসায় নিজের কাজ নিজে করতে উৎসাহিত করা।
এখনকার শিশুরা টেলিভিশন দেখে, ভিডিও গেমস খেলে আর কম্পিউটারের বোতাম টিপে সময় কাটায়। অনেক শিশু, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারে যাদের বসবাস, তারা আঁশযুক্ত খাবার শাকসবজি, ফলমূল খেতে চায় না। ফাস্টফুড, চকোলেট, কোমল পানীয়, ফলের রস বেশি খায়। শারীরিক শ্রমে যেটুকু শক্তি ব্যয় হয়, এর চেয়ে বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করায় বেড়ে যায় মোটা হওয়ার প্রবণতা। এ ছাড়া এখনকার শিশুরা একটু বড় হয়ে ঘরের কাজে কোনো আগ্রহ দেখায় না। এমনকি নিজের কাজেও অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তার ওজন বেড়ে গেলে পরবর্তীকালে যে ধরনের জটিলতা দেখা দেয়, তা হলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়; উচ্চরক্তচাপ, হার্টের সমস্যা দেখা দেয়; ডায়াবেটিস, হাড় ও গিঁটে ব্যথা দেখা দেয়; শ্বাসকষ্ট, ঘুম ঘুম ভাব, ঘুমের মধ্যে নাকডাকা, ঘুমের ভেতর শ্বাসকষ্ট হয় (সিøপ এপনিয়া); পিত্তথলিতে পাথর বা প্রদাহ, চর্বি জমে লিভারের স্থায়ী সমস্যা হয়ে থাকে; অল্প বয়সে দাড়ি-গোঁফ ওঠে বা মেয়েশিশুর মাসিক শুরু হয়ে যায়; ঘাড় ও ভাঁজে ভাঁজে কালো দাগ দেখা দিয়ে থাকে; শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা সৃষ্টি হয়।
স্থূলতা রোধে করণীয়: এ সমস্যা নিরসনে মা-বাবার ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ দিতে হবে। কৌটার দুধ বা কৃত্রিম খাবার খাওয়ালে সে দ্রুত মোটা হয়ে যেতে পারে। ছয় মাস বয়স থেকে পরিবারের খাবারÑ যার মধ্যে অবশ্যই শাকসবজি, ফলমূল থাকবে। ভাত, আলু, মিষ্টি কম খেতে দিতে হবে যদি শিশুর ওজন বেড়ে যেতে থাকে। জাংক বা ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম কম খেতে দিতে হবে। তাকে নিজের কাজ নিজের করতে উৎসাহ দিতে হবে। বাইরে খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। ভিডিও গেমস ও টেলিভিশনের সামনে বসে খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করাতে হবে। প্রয়োজনে পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
স্থূলতা এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। তাই আসুন, শিশুর ভবিষ্যৎ গড়নে আজই উদ্যোগী হই। [২]
[১] অনলাইন ডেস্ক [২] ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার, সহযোগী অধ্যাপক শিশুরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
কমেন্টস করুন