প্রতিদিনের ডায়েটে যদি শসাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে আপনি থাকবেন বিভিন্ন মৌসুমি রোগমুক্ত। শরীরকে কর্মক্ষম ও ঝরঝরে রাখতে শসা বেশ কার্যকরী। তাই তো সালাদ হোক কী ঝাল মশলা দেওয়া রাজকীয় পাখোয়ান, সবার সঙ্গেই শসাকে সঙ্গী করা হয়। এবার আসুন জেনে নেই নিয়মিত শশা খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায়…
১. কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমায়: প্রকৃতির ডাক মানেই যন্ত্রণার অনুভূতি? তাহলে তো আজ থেকেই শসা খাওয়া শুরু করা উচিৎ। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমাতে শসার ভূমিকা অনন্য। সবজিটির ফাইবার, পেটে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের প্রকোপ নিমিষেই দূর হয়।
২. ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে: বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার যেভাবে মহামারী রূপ নিচ্ছে তাতে এই পরিস্থিতিতে সকলেরই অতিরিক্ত সাবধান থাকা একান্ত প্রয়োজন। প্রতিবছর নতুন করে ক্যান্সারে রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ২০২০ সাল নাগাদ মহামারী আকার ধারণ করবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। তাই এমন সব খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত যা এই মারণ রোগ থেকে আপনাকে দূরে রাখবে। আর এক্ষেত্রে শসাকে বাদ দেওয়া কোনও ভাবেই চলবে না। কারণ শসাতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে।
৩. পানির অভাব পূরণ করে: এই গরমে দেহে পানির মাত্রা স্বাভাবিক থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে পানিস্বল্পতার কারণে একাধিক জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন শসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ শসার প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি এবং এটি সহজেই পানির ঘাটতি দূর করে ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
৪. ত্বকের পরিচর্যায়: শসাতে সিলিকা নামক একটি উপদান রয়েছে, যা ত্বকের কোষের সজিবতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে ত্বকের আভা বৃদ্ধি তো পায়ই, সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি পেশী, লিগামেন্ট এবং হাড়ের শক্তিও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, শসা খাওয়া শুরু করলে দেহে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে, ফলে ত্বকে জমে থাকা টক্সিক উপাদানগুলো বেরিয়ে য়ায়। ফলে ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। ফলে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতে যে সময় লাগে না, তা বলাই বাহুল্য!
৫. খনিজের ঘাটতি মেটে: খেয়াল করে দেখবেন অনেকেই ত্বকের পরিচর্যায় শসাকে কাজে লাগিয়ে থাকেন। কেন এমনটা করেন, জানেন? কারণ শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম এবং সিলিকন। এই সবকটি খনিজ সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই যদি অল্প দিনেই তরতাজা দেহ পেতে চান, তাহলে শশা থাকুক হাতে কাছে।
৬. পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়: ৩০০ গ্রাম শসার প্রায় ১১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম ফাইবার, দিনের চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ ভিটামিন সি এবং ৬২ শতাংশ ভিটামিন কে থাকে। সেই সঙ্গে থাকে দিনের চাহিদার ১০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ১৩ শতাংশ পটাশিয়াম এবং ১২ শতাংশ মেঙ্গানিজ। এই সবকটি উপাদানই আমাদের শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত শসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৭. দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে: খাতা-কলমে এখন বর্ষাকাল। কিন্তু প্রতিদিনই গরম বাড়ছে। এমন অবস্থায় দেহের তাপামাত্রা স্বাভাবিক রাখতে শাসা খাওয়াটা জরুরি। কারণ শসা দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে। ফলে সানস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, প্রচন্ড তাপদাহের কারণে ত্বক পুড়ে গেলেও শসা লাগাতে পারেন। কারণ পোড়া ভাব কমাতে শসার জুড়ি নেই।
৮. শরীরকে বিষমুক্ত করে: শসা দেহের টক্সিক উপাদনগুলো ধুয়ে মুছে বার করে দেয়। ফলে শরীরে বিষের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে কোনও ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৯. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: একেবারে ঠিক শুনেছেন ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাস্তবিকই এই ফলটি ভূমিকা রাখে। শসা খেলে শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা কমাতেও শশা অনন্য।
১০. ওজন কমে: অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে সকাল-বিকাল শসা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার দ্রুত ওজন কমে যাচ্ছে। কারণ শসার জলীয় উপাদান দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাট রাখে এবং এতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।
কমেন্টস করুন