বয়স অনুযায়ী আলাদা ত্বকের যত্ন
অ্যান্টি এজিং, কথাটা এখনকার প্রায় প্রতিটি নারী জানেন। তবে, এই জানাটা হয়েছে কিছু নামী দামি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের দৌলতে। প্রায়শই টেলিভিশনে দেখতে পান কিভাবে ৪৫ বছরের হয়েও ২৩ বছরের লুক রাখবেন। কিন্তু আদপে এই একটি কাজো কি হয় ওই ক্রিম গুলির সাহায্যে? না, এইভাবে ত্বকের ওপর থেকে বয়স বাড়ার প্রভাব আটকে রাখা যায় না। কিন্তু তারমানে এই নয় যে আপনি নিজের বয়সের প্রভাব আটকে রাখতে পারবেন না।
প্রতিদিনের জীবনযাত্রা কিভাবে চালাচ্ছেন তার ওপরেও নির্ভর করে আপনার ত্বকের বয়স। নিয়ম করে নিজের বয়স আটকানোর জন্য ক্রিম, ফেসপাউডার মাখছেন, বিভিন্ন বিউটি টিপস মেনে চলছেন। কিন্তু শুধু বিউটি টিপস মানলেই আপনার বয়স আটকে থাকবে না, সে তার নিয়ম অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।
তবে, বয়স অনুযায়ী অ্যান্টি এজিং এর ক্রিম ভুল ব্যবহার হলেও অনেক সময় আগেই মুখে দাগ বা বয়সের ছাপ পড়তে থাকে। তাই জেনে নিন কোন বয়সের নারীদের কি করা উচিত। নাহলে, যতই ক্রিম আর টিপস মেনে চলুন কিছুতেই লাভ না হয়ে ক্ষতি হবে।
২০ বছরের নারীদের জন্য: ২০ বছর বয়স অর্থাৎ সদ্য কৈশোর অবস্থা থেকে যৌবনে পা রেখেছেন। এই সময় মেয়েদের ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই খুব সুন্দর থাকে। তাই এই সময় চেষ্টা করবেন যততা সম্ভব কম রাসায়নিক ক্রিম বা মেকআপ করার। কোনো বিশেষ দিনে মেকআপ বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু প্রতিদিনের কলেজ যাওয়ায় রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার একদম কম করবেন।
প্রধানত ভারি ক্রিম ২০ বছরের মেয়েদের ত্বকের জন্য খুব বেশি ভারি হয়ে যায়। এরফলে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে এবং খসখসে হয়ে যায়। ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত যদি বেশি ক্রিম বা সেরাম ব্যবহার করেন তাহলে সেই অভ্যাস আপনার ত্বকে হয়ে যাবে এবং সময়ের অনেক আগে আপনার ত্বক রুক্ষ দেখাবে। তাই প্রতিদিন ক্রিম, ভারি মেকআপ থেকে দূরে থাকুন, নিয়মিত জল এবং ফল- সবজি খান, তাহলেই আপনার ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং তরতাজা থাকবে।
৩০ থেকে ৪০ বছরের নারীদের জন্য: ৩০ বছরের পর থেকেই ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ধীরে ধীরে হারাতে থাকে। মুখের ওপর বলিরেখা পড়তে থাকে, চোখের কোণে হালকা দাগ দেখা দেয়। এই সময় প্রকৃতঅর্থে অ্যান্টি এজিং ক্রিম দরকার হয়। সারাদিন কাজ করার পর শুতে যাওয়ার আগে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিয়ে আলতোভাবে অ্যান্টি এজিং ক্রিম বা অ্যালোভেরা লাগিয়ে ঘুমোতে যান। খুব ভারি কিছু ক্রিম ব্যবহার না করলেও প্রতিদিন শুতে যাওয়ার আগে নাইটক্রিম অবশ্যই লাগাবেন।
কিছুদিন ব্যবহার করার পর দেখবেন বলিরেখাগুলি হালকা হতে শুরু করেছে, তখন আবার অ্যান্টি এজিং ক্রিম লাগানো বন্ধ করে দিন। শুধুমাত্র শুতে যাওয়ার আগে ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে মুখ ধোবেন এবং হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লোশন বা পাউডার ব্যবহার করবেন। সবথেকে বড় কথা হলো উগ্র মেকআপ বা সাজ একেবারেই করবেন না। সুস্থ জীবনযাত্রা পালন করুন তাহলে নিজের মুখে বলিরেখার দাগ সম্পূর্ণ সরিয়ে না দিতে পারলেও কম অবশ্যই করতে পারবেন।
৫০ বছরের নারীদের জন্য: এই সময় নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সবার মুখেই বয়সের ছাপ দেখা যায়। তবে, নারীদের বয়সের ছাপের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারণ হলো বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন। ৫০ বছরের পর নারীদের মেনোপজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য শারীরিক বহু পরিবর্তন দেখা যায়, যার প্রভাব ত্বকেও পড়ে। এই সময় নিজের ত্বককে তুলনামূলক ভালো রাখার জন্য একমাত্র উপায় হলো ভালো ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার দেয়া ডায়েট রুটিন মেনে চলা।
সবথেকে বড় কথা খাওয়া, ঘুম প্রতিদিন সময়মত করলে ত্বক অন্যান্য বয়স্ক নারীদের থেকে অনেক বেশি ভালো রাখতে পারবেন।
কোন বয়সের জন্য কোন ফেসিয়াল উপযুক্ত
আজকালকার মেয়েরা অল্প বয়সেই ফেসিয়াল করার জন্য ঝুঁকে পড়ে । কিন্তু সব বয়সের জন্য ফেসিয়াল তো আর এক না । বয়স ভেদে যেমন ত্বকের পরিবর্তন হয় , তেমনি ত্বকের এই ভেদাভেদের কারনে ফেসিয়ালের তারতম্য হওয়াটাও স্বাভাবিক । মূলত ফেসিয়াল করার মূল কারন হল , ত্বক পরিষ্কার রাখা। আর ত্বক পরিষ্কারের কাজটি সকল বয়সেই করা প্রয়োজন । অল্প বয়স থেকেই ত্বক পরিষ্কার করার সচেতনতা গ্রহন করলেই , বয়স বাড়ার পর পর্যন্তও আপনার ত্বক থাকবে আকর্ষণীয় । জেনে নিন কোন বয়সে কেমন ফেসিয়াল হবে –
১৭-২০ বছর : এ বয়সে আমাদের ত্বকে তৈলাক্ত ভাব একটু বেশী থাকে। যার প্রভাবে ত্বকে ব্রণ উঠার প্রবণতাও দেখা দেয়। তাছাড়াও এই বয়সে ছেলেমেয়েরা বাইরে ঘুরতে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দারুণ পছন্দ করে। ফলে, রোদ, বৃষ্টি কিছুই যেন এই বয়স মানতে চায় না। তাই এই বয়সটিতে ত্বক পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। টিনএইজে তাই হারবাল কোনো ফেসিয়াল facial করা সবচেয়ে ভালো, যেন ত্বকে ময়েশ্চারাইজার পরিপূর্ণ থাকে। তাই এই বয়সে হলুদ, পুদিনা পাতা, শশা, মধু এই উপাদান সমৃদ্ধ ফেসিয়াল করা ভালো। এক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন হানি ফেসিয়াল, কিউকাম্বার ফেসিয়াল, অরেঞ্জ ফেসিয়াল।
২১-৩০ বছর : ২০ বছর বয়সের পর, যে কেউই ফেসিয়াল করতে পারে। ত্বকের নানান সমস্যা, যেমনঃ শুষ্ক, সাধারণ ও তৈলাক্ত ত্বকে ভেদে সমস্যা না থাকলে, হারবাল ফেসিয়াল করাই ভালো। এছাড়াও পার্ল ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য, তবে স্পর্শকাতর ত্বকে এই ফেসিয়াল facial করা উচিত না। পার্ল ফেসিয়ালে ত্বকে একটা হোয়াইট আভা আসে, যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এটা সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী শুধু সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর ত্বকে এই ফেসিয়াল করা যাবে না। তাছাড়াও এটা সব বয়সী ত্বকের জন্যই উপকারী। তবে, বিয়ের কনের জন্য গোল্ড ফেসিয়াল খুব ভালো ফলাফল দেবে। কারণ এটা ত্বকে সুন্দর একটা সোনালী আভা এনে দিতে সাহায্য করে।
৩১-৪০ বছর : এই বয়সে ত্বকের পরিবর্তন হতে থাকে। তাই ত্বকের কমপ্লেক্সশন পরিবর্তন করার লক্ষ্যে, এমন ফেসিয়াল করতে হবে যা, ত্বককে হাইড্রেট, ময়েশ্চারাইজ করে। এসময় তাই কাজের ফলে ত্বকের সকল ধকল থেকে পরিত্রাণ পেতে হালকা ম্যাসাজ দিয়ে ফেসিয়াল শুরু করতে হবে। তারপর স্ক্রাবিংয়ের সাহায্যে মরা কোষ দূর করে, সবশেষে হাইড্রেটিং মাস্ক লাগিয়ে ফেসিয়াল facial সম্পন্ন করা যেতে পারে। এসকল উপকার পেতে তাই, এই বয়সে স্টিম ফেসিয়াল, অ্যান্টি-রিঙ্কেল ফেসিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেনট ফেসিয়াল উপকারী হবে। তাছাড়াও এই বয়সে ফ্রুট ফেসিয়াল দারুণ কার্যকরী হতে পারে। এই ফেসিয়ালে, যে ফ্রুট ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তা সব ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী। ফ্রুট ফেসিয়াল ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, এবং ত্বক টানটান রাখে। সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য তাই, ফ্রুট ফেসিয়ালই উপযুক্ত।
৪১-৫০ বছর : এই বয়সে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া শুরু করে। কিন্তু এই অবস্থা কখনোই রূপসচেতনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সাধারনত ৪৫ বছরের পর থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এই অবস্থা আগেই দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও বয়সের ছাপের পাশাপাশি এই বয়সে চেহারায় কালো কালো ছোপ পড়তেও দেখা যায়। তাই এগুলো দূর করতে ভেজিটেবল পিলিং এবং থার্মোহার্বের ফেসিয়ালটি করা প্রয়োজনীয়। এতে চেহারার কালো দাগ black spot চলে যাবে, ত্বকে উজ্জ্বলতা আসবে। এছাড়াও অ্যান্টি-রিঙ্কেল ফেসিয়াল, চকলেট ফেসিয়ালও এই বয়সের জন্য উপযুক্ত।
কিশোর ত্বকে
কৈশোরে পড়াশোনার চাপ থাকে প্রচুর। বয়স কম থাকে বলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় না অনেকের। অনেকে মনে করেন, এত কম বয়সে আবার রূপচর্চা! তবে একটু যত্ন নিলে কিশোরীর ত্বক থাকবে কোমল ও ব্রণমুক্ত৷ কিশোর বয়সেও প্রকৃতির হাওয়া বুঝে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রূপবিশেষজ্ঞরা। বয়ঃসন্ধিতে হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে শারীরিক অনেক পরিবর্তন আসে৷ ১৩-১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মুখে ব্রণ ওঠা খুব পরিচিত একটি সমস্যা। ত্বকের যত্নের সঠিক নিয়ম না জানলে, অথবা এই সময়ে বড়দের নিয়ম অনুসরণ করতে গেলেই বাধতে পারে বিপত্তি। মিউনিস ব্রাইডালের স্বত্বাধিকারী তানজিমা শারমিন বলেন, এই বয়সী ছেলেমেয়েদের সুন্দর ও সুস্থ থাকার জন্য খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। ভালো থাকার জন্য খুব সাধারণ ও প্রচলিত কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই এ সময় ওরা ত্বক ও চুলের সুস্থতা ধরে রাখতে পারবে। এই বয়সটাতে পড়াশোনার বাড়তি একটা চাপ থাকে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আর শীতকালে পানিও বেশি খেতে চায় না। ত্বক এভাবে পানিশূন্য ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে৷
কিশোর-কিশোরীদের ত্বক ও চুলে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞরা-
১. ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে এসেই মুখ, হাত, পা কুসুম গরম পানিতে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. এই বয়সী ছেলেদের ত্বক বড়দের মতো পরিপক্ব নয়৷ তাই কিশোরদের বড় ছেলেদের বা মেনজ ফেসওয়াশ ব্যবহার করা ঠিক নয়। তার বদলে মাইল্ড বা মৃদু ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক করে দেয় এমন কোনো সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না।
৩. ত্বক পরিষ্কার করার জন্য আঙুরের রস, শসার রস ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে।
৪. মুখ ধোয়ার পর ভেজা ভাব থাকতেই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ত্বকে যদি ব্রণের সমস্যা খুব বেশি থাকে, তাহলে ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
৫. এই বয়সে হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাক হেডসের সমস্যাও অনেকের বেড়ে যায়। বাজারের স্ক্রাবের চেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি স্ক্রাব ব্যবহার করলেই ভালো।
৬. চালের গুঁড়া, দুধ বা টক দই, পেস্তা বাদাম, মসুর ডাল অল্প পরিমাণে নিয়ে তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ব্ল্যাক হেডস ও ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে।
৭. নিম পাতা, তুলসী পাতা এবং অ্যালোভেরা সমপরিমাণে মিশিয়ে মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে ব্রণের সমস্যা দূর হবে, ত্বক হবে মসৃণ।
৮. শীতে খুশকির সমস্যা অনেক বেড়ে যায়, চুলের খুশকি চোখ ও ত্বকে লাগলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেথি, মেহেদি পাতা, টক দই ও লেবুর রস ভালো মতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি দুই থেকে তিনবার ব্যবহারেই খুশকি কমে আসার কথা।
৯. হাত-পায়ে লোশন ব্যবহার করতে হবে, আর ত্বক বেশি শুষ্ক হলে এই ঋতুতে লোশনেও কাজ না দিতে পারে। তখন জলপাই তেল ত্বক কোমল করবে।
বয়স কমিয়ে ফেলুন ১০ বছর!
বর্তমানে অনেককেই বয়স হয়ে যাওয়ার আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। এর পেছনের মূল কারণ আমাদেরই খামখেয়ালী অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, ত্বকের যত্ন এবং আবহাওয়া এই সকল কিছুর কারণেই ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকে বা নষ্ট হতে পারে। এছাড়াও বয়স হয়ে গেলে ত্বকে তো বয়সের ছাপ আরও ভালো করেই পড়ে যায়। বয়স হয়ে যাওয়ার পর বয়সের ছাপ পড়া এবং অল্প বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া দুটোই ভাবিয়ে তোলার মতো। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কি জানেন? প্রকৃতি সকল সমস্যার সমাধানের উৎস।
বয়স ধরে রাখার চেষ্টা মানুষের আদি থেকে। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তা ত্বকে ফুটে উঠে। যা আমরা বলিরেখা বলে থাকি। বলিরেখা রোধ করার জন্য কত কিছুই না করে থাকি আমরা। এর কতটুকুই বা কার্যকর হয়ে থাকে !প্রকৃতি আমাদের এমন কিছু উপাদান দিয়েছে যা এই সমস্যারও সমাধানে কার্যকরী। আজকে আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো এমনই একটি পদ্ধতির যা আপনার ত্বকের বয়স প্রায় ১০ বছর কমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, প্রকৃতি আমাদের জন্য এতো অসাধারণ সমাধান রেখেছে। চলুন তাহলে শিখে নেয়া যাক এমন একটি জাদুকরী পদ্ধতি যা আপনার ত্বকের বয়স কমিয়ে দেবে প্রায় ১০ বছর।
সারা বিশ্বের সুন্দরী নারীদের মধ্যে জাপানিজরা অন্যতম। নিখুঁত, তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য তারা সারাবিশ্বে সমাদৃত। এমনকি কোন এক জাদুকরী কৌশলে তারা ত্বকের বলিরেখা পড়া রোধ করতে সক্ষম হয়েছে! তাদের এই তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের রহস্যটি কি? এক্সফলিয়েট, লেজার ট্রিটমেন্ট নাকি কোন বিউটি ট্রিটমেন্ট? তাদের এই সৌন্দর্যের সকল রহস্য নিহিত আছে একটি মাত্র সাধারণ উপকরণে। আর তা হল ভাত! কি অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই তারা ত্বক এবং চুলের যত্নে ভাত ব্যবহার করে থাকেন। ভাতের মাড় দিয়ে তারা চুল ধুয়ে থাকেন, চুল নরম, কোমল সুন্দর করার জন্য। ত্বকের বলিরেখা রোধ করার জন্য এমনি এক ভাতের প্যাক ব্যবহার করে থাকেন তারা।
যা যা লাগবে: ২-৩ টেবিল চামচ সিদ্ধ ভাত, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ দুধ
যেভাবে তৈরি করবেন:
১. প্রথমে ৩ কাপ ঠান্ডা পানিতে চাল ধুয়ে সিদ্ধ মাঝারি আঁচে সিদ্ধ করতে দিন। চাল সিদ্ধ হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
২. এবার ভাত ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে চটকে নিন। এর সাথে গরম দুধ এবং মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন।
৩. এখন প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে নিন।
৪. ৩০- ৪০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ভাতের মাড় দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৫. এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
টিপস: এই ভাতের মাড় ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন ৪ দিন পর্যন্ত। এছাড়া বরফ তৈরি করে নিতে পারেন ভাতের মাড় দিয়ে। এই বরফ দিনে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
ভাবছেন এই পদ্ধতিটি কীভাবে কমাবে ত্বকের বয়স? চলুন তাহলে জানিয়ে দিই এই ফেসমাস্কটির কার্যকারণ :
১. চালের মধ্যে রয়েছে ত্বকের ক্ষতিপূরণের অসাধারণ গুণ যা ত্বকের কোলাজেন টিস্যুর ক্ষতি পূরণ করে দিতে সক্ষম। চালের লিনোলেইক এসিড এবং স্কোয়ালেন নামক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষতি পূরণ করে এবং কোলাজেন টিস্যুর সার্বিক উন্নতিতে কাজ করে।
২. স্কোয়ালেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি ত্বক থেকে সূর্যরশ্মির মাধ্যমে হওয়া ক্ষতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং ত্বকে সূর্যরশ্মির কারণে পড়া রিংকেল দূর করতেও সহায়তা করে।
৩. চাল ত্বকের সার্বিক উন্নতিতে বিশেষভাবে কার্যকরী যার ফলে ত্বকের বয়সের ছাপ, রিংকেল এবং কোলাজেন টিস্যুর ক্ষতি পূরণ করে খুবই দ্রুত। এছাড়াও মধু ও দুধের গুণাগুণ তো রয়েছেই। আর একারণেই ত্বকের বয়স কমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এই মাস্কটি।
কমেন্টস করুন