আপনার দেখা সবচেয়ে বাজে দুঃস্বপ্ন কী? আপনি প্রায়ই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেন? এটা কী এমন যে আপনি মারা যাচ্ছেন নাকি আপনার পছন্দের কেউ বিপদে পড়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি কিছু করতে পারছেন না? অথবা এমনও হতে পারে আপনি স্বপ্নে দৌড়াচ্ছেন আর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায় আর আপনি উঠে বসে পড়েন। সেই সময়ে আপনার একটা জিনিসই মাথায় থাকে, যাক তাহলে স্বপ্নটা শেষ হলো!
দুঃস্বপ্নকে মূলত সেই স্বপ্নের শ্রেণিতে রাখা হয় যেগুলো বাস্তববাদী আর সেগুলো প্রায়ই মানুষের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। এ সবগুলোই জটিল অভিজ্ঞতা। যদিও দুঃস্বপ্নের সময় ভয়ই বেশি আধিপত্য বিস্তার করে তবে ২০১৪ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে দুঃখ, রাগ, গ্লানি,হতাশাও দুঃস্বপ্নের সময় অনুভূত হয়। ৩৫১ জনকে নিয়ে করা অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ দুঃস্বপ্নে যিনি স্বপ্ন দেখেন তিনি শারীরিক কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হন অথবা কেউ তাকে তাড়া করে শারীরিক ক্ষতি করার জন্য।
তবে আপনি যদি প্রায় প্রতিদিনই এরকম দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন তাহলে এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ একটি লক্ষণ। ধারণা করা হয় যে ২-৮% পূর্ণবয়স্ক মানুষ এই দুঃস্বপ্নের জন্য মানসিক প্রশান্তি পান না এবং এর জের ধরে সারাদিন কাজ করার পূর্ণ শক্তি পান না। শুধু তা-ই না নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকলে সেটা একজন মানুষের ঘুমের প্যাটার্ন বিঘ্ন ঘটায়। কিছু দুঃস্বপ্ন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্দেশ করে বিশেষ করে উদ্বিগ্নতাসহ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার দেখা দেয়।
আরেক ঘটনা হচ্ছে রেম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার। রেম হচ্ছে র্যাপিড আই মুভমেন্ট। যে সময়ে সবচেয়ে ভালো ঘুম হয় সেটাই হচ্ছে রেম। রেম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিসর্ডারে একজন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখাকালে চিৎকার করে উঠে বা ভয়ে দ্রুত ঘুম থেকে থেকে উঠে পড়ে। শুধু তাই না এই অসুখের ফলে পার্কিনসন ডিজিসও দেখা যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে দুঃস্বপ্ন আমাদের অতীতের কষ্টের স্মৃতিকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়। তবে এ কষ্টের স্মৃতি গুলো আমাদের সামনে আসার ফলে সেটা সহ্য করার একটা ক্ষমতা আমাদের মধ্যে জন্মে।
মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড ছিলেন স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। তার বিখ্যাত বই ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমসে ফ্রয়েড বলেন স্বপ্ন আসলে আমাদের আশার, আকাঙ্ক্ষার ও চিন্তাভাবনার একটি রূপ যেটি আমাদের মস্তিষ্কে উদ্ভটভাবে গঠিত হয়।
এক তত্ত্বে এলিশ বলেন স্বপ্ন আমাদের সমস্যা সমাধানের একটি ব্যায়ামের মতো। অর্থাৎ সে হিসেবে দুঃস্বপ্ন হচ্ছে আমাদের মনের আবেগিক বিষয়। দৈনন্দিন কার্যকলাপে আমরা যেসব সমস্যার সমাধান করতে পারি না দুঃস্বপ্নে আমরা সেই সমস্যার একটি রূপ ও বিভিন্ন চরিত্র দেখতে পাই যা সেই সমস্যাগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বাতলে দেয় ও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
এলিশ আরো বলেন, কেউ যদি তার রোজকার চলাচলে অতিরিক্ত মানসিক সমস্যায় ভোগে তাহলে সেটাই তাকে দুঃস্বপ্ন দেখাতে পারে এবং এর জন্য ঘুমানোর সমস্যা তথা ইনসোমনিয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে জনি বেঞ্জামিনের ক্ষেত্রে তার মানসিক উদ্বিগ্নতা তাকে ঠিকভাবে ঘুমাতে দিত না। বিশেষ করে যখন তার বয়স বিশের ঘরে ছিল। বর্তমানে ৩১ বছর বয়সী জনি বেঞ্জামিন জানান মানসিক উদ্বিগ্নতার কারণে তিনি ঘুমাতে তো পারতেনই না, উল্টো ঘুমাতে গেলে রাত্রে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি করেছেন অনেক সময়।
একজন স্লিপ সাইন্টিস্ট বিল ফিশ বলেন, একজন মানুষ গড়ে প্রতি সপ্তাহে একবার দুঃস্বপ্ন দেখে। কিন্তু তারা সেটা মনে রাখে না কি ভুলে যায় সেটাই মূল কথা। তার মতে কেউ যদি নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকে তাহলে সেটা তার জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়।
নিয়মিত দুঃস্বপ্ন পিটিএসডি এর লক্ষণ। একজন ব্যক্তি কার জীবনে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতায় পড়ে মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। এটা আমাদের মন অবচেতনভাবে দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় এবং আমাদের মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে নিয়মিত দুঃস্বপ্ন বাই পোলার ডিজঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ।
ঘুমের চারটি স্তর আছে। প্রথম তিনটি স্তরে চোখের নড়াচড়া কম হয় এটিকে বলে স্লো আই মুভমেন্ট। আর চতুর্থ স্তরটি সবচেয়ে গভীর এটাকে বলে রেপিড আই মুভমেন্ট সংক্ষেপে REM বলে। মানুষ স্বপ্ন দেখে মূলত এই রেম দশায় যখন তার কঙ্কাল পেশীগুলো প্রায় প্যারালাইজড অবস্থায় থাকে। আর যাদের এই রেম দশা পর্যন্ত ঘুম ঠিকমতো হয় না তাদের অনেক মানসিক সমস্যা দেখা যায়।
ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো’র এক গবেষণায় দেখা যায় এরকম ৮০% লোকেরই মানসিক ব্যাধি বিশেষ করে পার্কিনসন ডিজিসসহ আরো অনেক ব্যাধি দেখা যায়। আবার এই রেম ঘুম আমাদের মানসিক আবেগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একজন মানুষ কত তাড়াতাড়ি ঘুমের রেম দশায় যেতে পারে তা দেখে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়।
আপনি যদি নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন এবং তারপর এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে ডাক্তার দেখাতে যান তাহলে ডাক্তার আপনাকে প্রথম যে প্রশ্নটি করবেন সেটি হবে আপনার জীবন ধারায় কোনো পরিবর্তন এসেছে কী না?
এ জীবন ধারা পরিবর্তনের মধ্যে হতে পারে আপনি নতুন কোনো ওষুধ খাচ্ছেন যেটা আপনার মানসিক সমস্যা তৈরি করছে, হতে পারে আপনার দৈনন্দিন খাবারে পরিবর্তন এনেছেন, কিংবা কোনো ঘটনার দ্বারা মানসিকভাবে এতটাই প্রভাবিত হয়েছেন যে আপনি সেটা মেনে নিতে পারছেন না অথবা স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরতে পারছেন না। আবার আপনার যদি আগে থেকে কোনো শারীরিক সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া কিংবা শ্বাসকষ্ট থেকে থাকে তাহলে আপনার প্রায় দুঃস্বপ্ন দেখা খুব অস্বাভাবিক কিছু না।
দুঃস্বপ্ন দেখার পেছনে থাকতে পারে অদ্ভুত ৫টি কারণ
ভয়াবহ এক স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে ঝটকা দিয়ে উঠে গেলেন। শরীর ঘামে ভিজে চুপচুপে, ওদিকে গলা শুকিয়ে কাঠ। ছায়ার দিকে তাকাতেও ভয় করছে। এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে সবারই। হরর সিনেমা দেখার পরই যে শুধু এমন স্বপ্ন তাড়া করে, তা নয়। বরং আমাদের দৈনিক, সাধারণ কিছু কাজেই দুঃস্বপ্নের ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণ একটি স্বপ্নের সাথে দুঃস্বপ্নের পার্থক্য হলো, দুঃস্বপ্ন দেখে মানুষ ঝট করে ঘুম থেকে উঠে যায়, আর সময়টা হলো মাঝরাতের পর বা ভোররাতের দিকে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মাঝে দুঃস্বপ্নের প্রবণতা বেশি থাকে। ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখেন। নারীরা বেশি দুঃস্বপ্ন দেখেন।
সাধারণত দুঃস্বপ্ন কদাচিৎ দেখে মানুষ। এতে ঘুমের তেমন একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু দুঃস্বপ্ন যদি ঘন ঘন দেখতে থাকেন ও ঘুম কম হতে থাকে, এমনকি কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যা হতে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখানো জরুরী। সাধারণত ১ শতাংশ মানুষের এ সমস্যাটি দেখা যায়। ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখার সাথে মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার সংযোগ রয়েছে। ফলে তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। এমনকি গ্লুকোজ ইনটলারেন্স ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কিন্তু কী করে কমাবেন দুঃস্বপ্ন? মূলত কী কারণে আপনার দুঃস্বপ্ন বেশি হচ্ছে, তা একটু খুঁটিয়ে দেখা দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কাজগুলো বাড়াতে পারে আপনার দুঃস্বপ্নের প্রবণতা-
আপনার থাকতে পারে মানসিক অসুস্থতা: নেতিবাচক চিন্তা, অমীমাংসিত সমস্যা থেকে দুঃস্বপ্নের সূচনা হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা কম্পিউটারের মতো কাজ করে। আমরা নেতিবাচক চিন্তা করলে স্বপ্নেও তেমনই নেতিবাচক চিন্তা আসতে পারে। ফিনল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা যায়, যাদের তীব্র ডিপ্রেশন বা কিছুটা হলেও নেতিবাচক আচরণ আছে, তারা বেশি দুঃস্বপ্ন দেখেন। দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেস থেকেও দুঃস্বপ্ন দেখা দিতে পারে। ব্যক্তিগত জীবনে শোক বা দুঃখের ঘটনা থেকে দুঃস্বপ্নের সূচনা হতে পারে।
কিছু বিশেষ ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য: ২০০১ সালের এক গবেষণায় যেসব মানুষ মাসে অন্তত দুইবার দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন তাদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, যারা বেশি স্পর্শকাতর প্রকৃতির মানুষ, তাদের নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা বেশি। এছাড়া যারা স্পর্শকাতর, উদার ও সৃজনশীল, তারা বেশি লম্বা, নিখুঁত ও রঙিন স্বপ্ন দেখেন।
আপনি আঘাত থেকে সেরে উঠছেন: মানসিক বা শারীরিক আঘাত, অর্থাৎ ট্রমার পর মানুষের দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা বেশি থাকে। তারা স্বপ্ন দেখার পর ভয় বা দুঃখ মনে নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন। এটা মাঝে মাঝে হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ঘন ঘন হওয়াটা বড় কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
আপনি ঘুমানোর আগে কিছু খেয়েছেন: ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে সব খাবার খাওয়া শেষ করা উচিত। কারণ খাওয়ার পর দুই ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে, দুঃস্বপ্নের কারণও হতে পারে। এই খাবার মেটাবলিজম বাড়ায়, শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় ও দুঃস্বপ্ন তৈরি করতে পারে। আইসক্রিম বা অন্য দুগ্ধজাত খাবার খেলে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে মানুষ। এছাড়া মশলাদার খাবার খেলে দুঃস্বপ্ন বেশি হয়। অ্যালকোহল পান করলে ভাঙা ভাঙা দুঃস্বপ্ন তৈরি হয়, এমনকি হাত-পা ছোঁড়া বা ঘুমের মাঝে হাঁটার ঘটনাও দেখা দিতে পারে।
আপনার ওষুধ দুঃস্বপ্ন তৈরি করছে: কিছু কিছু ওষুধের কারণে আপনি দুঃস্বপ্ন দেখতে পারেন। যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন ও স্টেরয়েড। আলঝেইমার্স, পারকিনসন’স ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধও ঘুম নষ্ট করে ও দুঃস্বপ্ন বাড়ায়। দুঃস্বপ্ন ঘন ঘন দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
দুঃস্বপ্নের কারণ ও মুক্তির উপায়গুলো!
একেবারে কারণ ছাড়াই যেমন দুঃস্বপ্ন দেখা দিতে পারে, তেমনি জীবনে বিভিন্ন চাপ, দুশ্চিন্তা বা অসুস্থতা থেকেও দুঃস্বপ্নের উৎপত্তি হতে পারে। স্ট্রেসে থাকা মানুষেরা প্রায়ই একটা দুঃস্বপ্ন দেখে থাকেন আর তা হল উঁচু কোনও জায়গা থেকে পড়ে যাওয়া বা বিপদ থেকে দৌড়ে পালানো। যারা অতীতে খুব ভয়ঙ্কর কোনও দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন তাদের স্বপ্নে সেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায়। মাদকাসক্তি, ধূমপানে আসক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এসব আসক্তি ছেড়ে দেবার প্রক্রিয়ায় দেখা দেয় দুঃস্বপ্ন। আর দুঃস্বপ্নের খুব সাধারন আরেকটি কারণ হল রাতে দেরি করে খাওয়া। এতে অনেক সময় বদহজম হয়, ফলে পেটের গোলযোগ থেকে দুঃস্বপ্ন তৈরি হয়। এই খাবার হজম হলেও দেখা যায় হজমের পর খাদ্যের এই শক্তি ব্যবহার করে মস্তিষ্ক এত সক্রিয় হয়ে যায় যে খুব বাস্তব ধাঁচের দুঃস্বপ্ন দেখে মানুষ। ঘুম কম হলেও দুঃস্বপ্ন দেখা যায়।
দুঃস্বপ্ন এড়াবেন কি করে?
দুঃস্বপ্ন দেখার ফলে অনেকেই মানসিক চাপে থাকেন। স্ট্রেসের ফলে যেসব দুঃস্বপ্নের উৎপত্তি হয় সেগুলোর থেকে জন্ম নেয় আরও বেশি স্ট্রেস। আর বড়রা দুঃস্বপ্ন দেখে কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও বাচ্চারা দুঃস্বপ্ন দেখলে সেসব তাদের মনে অনেক গভীরভাবে দাগ কাটে। খুব সহজেই চমকে ওঠে তারা, দুঃস্বপ্নের ভয়ে ঘুমাতে চায় না। দেখে নিন দুঃস্বপ্ন দূর করার পদ্ধতি।
১. অনেক সময়ে বেশ কড়া কিছু ওষুধ খাওয়ার ফলে দুঃস্বপ্নের পরিমান বেড়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা কমানো বা ওষুধ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
২. স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মাঝে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপসর্গ যাদের মাঝে দেখা যায়, এসব জটিলতার কারনে তাদের দুঃস্বপ্ন তৈরি হতে পারে। এর চিকিৎসা করলে দুঃস্বপ্নের পরিমান কমে যায়।
৩. শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও মানসিক কারনে দুঃস্বপ্ন তৈরি হতে পারে। দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা থেকে দেখা দিতে পারে নিয়মিত দুঃস্বপ্ন। এসব জটিলতার চিকিৎসা করানোই সবচাইতে ভালো উপায়।
৪. ঠিক সময়ে ঘুমানো এবং গভীর ঘুম দুঃস্বপ্ন দূর করতে সাহায্য করে। ভারী ব্যায়াম, যোগব্যায়াম এবং ধ্যান এক্ষেত্রে কাজে আসে।
৫. বেডরুমের পরিবেশ যেন ঘুমের সহায়ক হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন। বেডরুমে অফিসের কাজকর্ম নিয়ে আসবেন না।
৬. এ ছাড়াও চা-কফি অর্থাৎ ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় বেশি রাত করে খাবেন না। বিকেলের পর তো নয়ই। কারন এগুলো আপনার শরীরে থেকে যেতে পারে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
আপনার শিশু কি দুঃস্বপ্ন দেখছে? দেখে নিন সমস্যা এবং সমাধান!
শিশুরা স্বর্গের প্রতিনিধি। তাদের ঘুম হয় নিবিড়, সুন্দর। তবুও কিছু কিছু শিশুর ঘুমে হানা দেয় দুঃস্বপ্নেরা। তারা চিৎকার করে ওঠে ভয়ে। তাদের বুক ধড়ফড় করে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই দুঃস্বপ্নের কারনে শিশু আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটায়। দুঃস্বপ্নের কারনে একটি শিশুকে যেতে হয় নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে। চলুন দেখে আসি দুঃস্বপ্ন শিশুর জীবনে কি কি সমস্যা নিয়ে আসতে পারে এবং এর সমাধানের উপায়।
ঘুমের সমস্যা: দুঃস্বপ্নের কারনে রাতে শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এতে করে শিশুর নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু ঘুমালেই শিশু দুঃস্বপ্ন দেখে, সেহেতু ঘুমের প্রতি শিশুর ভয় কাজ করে। তাই স্বাভাবিক নিয়মে শিশু ঘুমাতে চায় না।
মানসিক সমস্যা: এসব শিশুর মধ্যে বড় হয়ে জটিল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়ে থাকে এমনটিই দাবি গবেষকদের। প্রত্যেক শিশুরই কিছু সাধারণ দুঃস্বপ্ন থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়। ঘুম ভাঙার পর তা মনেও রাখতে পারে না শিশুরা। তবে এটি ক্রমাগত হতে থাকলে তা গুরুতর কিছুর লক্ষণ হতে পারে।
গবেষকের মতামত: একদল ব্রিটিশ গবেষক প্রায় ছয় হাজার ৮০০ বাচ্চার ওপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। শৈশবে দীর্ঘমেয়াদী দুঃস্বপ্ন ও ভয় পাওয়ার সাথে পরবর্তীতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে ৪৭ জনের কিছু মানসিক সমস্যার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্ধকার চরিত্র, ভয়ংকর দৈত্যরা শিশুদের কাছে বাস্তব হয়ে ওঠে৷ ফলে দিনের পর দিন ধরে মনের মধ্যে তাদের প্রভাব থেকে যায়৷ শিশুদের মনে স্বপ্নের আবেগ-অনুভূতি বিশেষ ভাবে দাগ কাটে৷ দিনে মনের মধ্যে যে চাপ তৈরি হয়, যে সব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়, দুঃস্বপ্ন সে সবেরই প্রতিফলন৷ যে কোনো শিশুর বিবর্তনের ক্ষেত্রেই রাতে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক৷ কিন্তু সেই ভয় দূর না হলে বুঝতে হবে যে মনের মধ্যে কোনো সংঘাত চলছে৷ তখন তার চিকিৎসা দরকার৷
সমাধানের উপায়
চিকিৎসা ছাড়াও কিছু চর্চা শিশুদেরকে দুঃস্বপ্ন মোকাবিলা করাতে অভ্যস্ত করে তুলতে পারে-
দুঃস্বপ্নের ছবি আঁকা: জার্মান মনোবিজ্ঞানী রাবেয়া ম্যুলার একটি বিশেষ কর্মশালা চালাচ্ছেন এ ব্যাপারে। তিনি শিশুদেরকে দুঃস্বপ্নের ছবি আঁকতে বলেন। তারপর দুঃস্বপ্নে দেখা ঘটনাগুলোকে ছবির সাথে পরিবর্তিত করতে শেখান। যেমন ধরা যাক একটি শিশু স্বপ্ন দেখে যে সে বিছানা বালিশ সহ উড়ে যাচ্ছে। এই ছবিটি আকার পর তাকে বলা হয় নেমে আসার ছবি আঁকতে। এরকম কিছু ছবি আঁকার পর তার ধারণা হয় যে সে স্বপ্ন পরিবর্তন করতে পারে। সে বিশ্বাস ফিরে পায়। বের হবার এমন সব পথ খুঁজে পেলে দুঃস্বপ্নের ভয়ংকর শক্তি কমে আসে৷ শিশুরা আর তখন নিজেদের অসহায় বোধ করে না, দুঃস্বপ্নের মধ্যে নিজেরাই পরিস্থিতির রাশ ধরে৷
শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন: তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। তাকে বোঝাতে চেষ্টা করুন এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এসব ব্যাপারে তাকে সাহসী হতে বলুন। আপনার শিশুকে বলুন দুঃস্বপ্নের ওইসব দৈত্য-দানবদের থেকে সে অনেক বেশি শক্তিশালী।
তাকে আশ্বাস যোগান: তাকে আশ্বাস যোগান। আপনি তার একমাত্র নির্ভরতা, এই বিশ্বাসটি গেঁথে দিন। আপনার শিশুকে বলুন আপনি থাকতে তার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।
তাকে বোঝান, দুঃস্বপ্ন একটা সমস্যা: তাকে বোঝান, দুঃস্বপ্ন একটা সমস্যা, কিন্তু এটা নিয়েও বেঁচে থাকা যায়। আপনার নিজের ভীতি এবং তা কাটিয়ে ওঠার নিয়মগুলো জানান। বিখ্যাত ব্যক্তিদের উদাহরণ দিন, যারা এ ধরণের সমস্যাকে জয় করে এগিয়ে গেছেন।
অন্ধকার ভীতি দূর করুন: অন্ধকার ভীতি দূর করুন। তার সাথে অন্ধকারের মধ্যে নানারকম খেলা খেলুন। যেমন, লুকোচুরি, ফ্ল্যাশলাইটের খেলা, লেজার লাইট ইত্যাদি। অন্ধকারের মধ্যেও মজা করতে পারলে তার ভয় অনেকটাই কমে আসবে। ঘুমানোর সময় তার কাছে তার প্রিয় কিছু যেমন পুতুল, বা লেগো সেট অথবা রঙ-তুলি রাখতে দিন।
টিভি ও সিনেমা দেখায় সতর্ক হোন: টিভি শো গুলোতে কার্টুন বা ছোটদের সিনেমাতেও ইদানিং বেশ ভয়াল ইমেজ থাকে। আপনার শিশুটি যদি বেশি সংবেদনশীল হয়, তাহলে তাকে এসব দেখা থেকে বিরত রাখুন।
মেডিটেশন বা পিএমআর শেখান: তাকে বিভিন্ন রিলাক্সেশন টেকনিক যেমন মেডিটেশন বা পিএমআর শেখান। নেট ঘাঁটলেই এ ব্যাপারে অসংখ্য টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। আপনার শিশু থাকুক ভয়মুক্ত সৃজনের আনন্দে হোক জয়যুক্ত।
কমেন্টস করুন