চীনে পাশ্চাত্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিচিতি পাবার হাজার বছর আগে থেকে চৈনিক লোক চিকিৎসা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। এখনো ঐতিহ্যবাহী চৈনিক লোক চিকিৎসকরা রোগীর জীবনমান উন্নত বা রোগ সারিয়ে তুলতে ওষুধের পরিবর্তে তার ক্রিয়াকলাপে খুব সামান্য পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। এই সামান্য পরিবর্তনের পরামর্শগুলো থেকে চৈনিক চিকিৎসকরা ২টি খুব সামান্য কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন, যা মূলত মানুষের আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি তার স্বাস্থ্যকেও সুরক্ষিত করে। তারা যা জানিয়েছেন তা আপনাদের না জানানো পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না। আসুন জেনে নেই ঠিক কী কী ব্যায়ামের কথা জানিয়েছেন তারা।
হাতের ব্যায়াম
আসুন একদম শুরু থেকে শুরু করি। হাজার বছর আগে যখন আধুনিক ওষুধ, ডাক্তার, ডায়াগনোসিস ছিল না তখন মানুষ অসুস্থ হলে কী করতো লোক চিকিৎসকরা? আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সুশ্রুত সংহিতার মতে, আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে আকুপ্রেশারের প্রচলন ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের এখানে এটি যথাযথ উপায়ে সংরক্ষিত হয়নি। প্রথমে শ্রীলংকায় পরে চীন ও জাপানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে এটি আকুপাংচাররূপে প্রতিষ্ঠা পায়। বর্তমানে চীন-ই সারা বিশ্বকে আকুপাংচার ও আকুপ্রেশার পদ্ধতিটির শিক্ষা দিচ্ছে। চীনা শাস্ত্র মতে আমাদের প্রত্যেকটি হাতে রয়েছে ৬টি করে চ্যানেল: বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ফুসফুস চ্যানেল, তর্জনীতে বৃহদান্ত্র চ্যানেল, মধ্যমায় হৃৎপিণ্ডের আবরণী চ্যানেল, অনামিকায় ট্রিপল হিটার চ্যানেল, কনিষ্ঠায় হৃৎপিন্ডের চ্যানেল এবং হাতে উল্টো পিঠে উল্টো চ্যানেল। এইগুলো ব্যবহার করে কিভাবে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়, ডাক্তাররা জানাচ্ছেন সেসব ব্যায়ামের কথা।
১. আপনার হাত সামনের দিকে সামান্য উঁচু করে ধরুন।
২. আঙুল আর তালু ভাজ করে গোলাকার করুন এবং ১৫০ বার ভিতর-মুখী ঘুরান।
৩. ভিতরমুখী শেষ হলে বাহির-মুখী করে ঘোরান।
বিকল্প হিসাবে উপরের ছবির মত ১৫০ বার করতে পারেন।
যদি প্রতিদিন এই ব্যায়ামটি করেন তাহলে আপনার ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশি নমনীয় করবে এবং কাঁধের ব্যথা নিরাময়ে ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, চৈনিক শাস্ত্র মতে যদি আপনি হাত দিয়ে কাজ না করতে পারেন বা হাত নাড়াতে না পারেন তাহলে তা হৃৎপিণ্ডের সমস্যা নির্দেশ করে।
গোড়ালির ব্যায়াম
পায়ের পাতায়ও হাতের মত বেশ কয়েকটি চ্যানেল রয়েছে। এর ৩টি পায়ের বাইরে, আর ৩টি পায়ের ভিতরে: পায়ের মধ্য রেখা বরাবর রয়েছে পিত্ত-থলীর চ্যানেল, পায়ের সামনের অংশে পাকস্থলির চ্যানেল, পায়ের পিছনে মূত্রথলির চ্যানেল, পায়ের ভিতরে যকৃত চ্যানেল, ভিতরের দিকে পায়ের সামনের দিক সংলগ্ন প্লীহার চ্যানেল এবং ভিতরের দিকে পায়ের পেছনের দিক সংলগ্ন রয়েছে কিডনি চ্যানেল। এই তথ্যের ভিত্তিতে খুব উপকারী একটি ব্যায়ামের কথা জেনে নিন।
১. বসুন।
২. পা দুটি সামান্য উঁচু করুন।
৩. গোড়ালি বাম দিকে ১৫০ বার ঘোরান।
৪. এরপর কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে আবার ডান দিকে ১৫০ বার ঘোরান।
এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পায়ের রক্ত সংঞ্চালন স্বাভাবিক করে আপনি ক্লান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন। এই দুটি ব্যায়াম বিছানায় থাকা অবস্থায়ও করা যায়। বুঝতেই পারছেন এর জন্য কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতি বা টাকা খরচ করে ব্যায়ামাগারের সদস্য পদ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। চীনা ডাক্তাররা বিশ্বাস করেন এই ব্যায়াম ২টি আপনার জীবনে বাড়তি কিছু বছর যোগ করে আপনার দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করবে।
বোনাস: ৫ মিনিট দৌড়ানো
গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট দৌড়ালে জীবনের সাথে বাড়তি ৩ বছর আয়ু যুক্ত হয়। এই গবেষণা থেকে জানা যায় যাদের ওজন বেশি তাদের ৫ মিনিটের এই দৌড় বেশ কাজে লাগে। ক্ষেত্র বিশেষে সাইকেলিং এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের চেয়েও এই ৫ মিনিট বেশি মূল্যবান।
এই ব্যায়ামটি কি আপনি করার চেষ্টা করবেন? এই ব্যায়ামগুলো কি শরীর ব্যথা বা মেরুদণ্ডে ব্যথা থেকে মুক্তি দিয়েছে? আপনি আপনার প্রতিদিনের জীবনে কোন ধরণের ব্যায়াম করেন? নিচের কমেন্টে জানিয়ে দিন আমাদের।
কমেন্টস করুন