মহিলারা সাধারণত দুইভাবে ডায়াবেটিসে ভোগেন। এক. গর্ভ সঞ্চারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস, দুই. গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত সন্তান জন্মদানের পর সেরে যায়। এদের পরবর্তীতে মায়ের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকলে তা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।
সকালে খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ মিলিমোল/লিটার (১১০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার চেয়ে বেশী অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলিমোল/লিটার (১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার চেয়ে বেশী হলে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে সনাক্ত করতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় OGTT (Oral Glucose Tolerance Test)।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে খুব শক্তভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা, শক্ত নিয়ন্ত্রণ না হলে অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করে। এজন্য প্রথমেই রোগীকে একটি খাদ্য তালিকা দেয়া হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত মায়েদের এমন খাবার দিতে হবে যা তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।মাকে নিয়ম মাফিক খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। এ সময় অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে।
এমন খাদ্য বাছাই করতে হবে যাতে চর্বির পরিমাণ কম ও বেশি আঁশযুক্ত। শর্করার উত্তম উৎস যেমন- ভাত, দানাদার শস্য, ফলমূল ইত্যাদি গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দুধ, বাদাম), লালশাক, পালংশাক, কচুরশাক, কচুর লতি, মলা-ঢেলা মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।
যদি হাঁটতে কোনো নিষেধ না থাকে তবে রোগীকে হাঁটার পরামর্শ দেয়া হয়। অনেকে মনে করেন, গর্ভকালীন হাঁটাহাঁটি করা যায় না। কিন্তু যদি কোনো জটিলতা না থাকে, তবে সে আধা ঘণ্টা হাঁটতে পারবে।
এর মাধ্যমে শরীর গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর তাতেও যদি না হয়, তখন তাকে ইনসুলিন দেয়া হয়। এসময় মুখে খাওয়ার কোন ওষুধ দেয়া হয়না।যাদের গর্ভসঞ্চারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং মুখে খাওয়ার ঔষধ ব্যবহার করেন; তাদের ক্ষেত্রে, গর্ভসঞ্চার হয়েছে বোঝার সাথে সাথেই মুখে খাওয়ার ঔষধ বন্ধ করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্টের ফলোআপে থাকতে হবে। আর গাইনোকোলজিস্ট যদি একা না পারে, তবে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়বেটোলজিস্টের কাছে রোগীকে যেতে হবে।জন্মের পরপরই এবং প্রতি ১ ঘন্টা পর পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ।
কারণ বুকের দুধ বাচ্চার রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে গ্লুকোজ কম থাকার দরুন যেসব সমস্যা হয় তা থেকে বাঁচায়। এছাড়া জন্মের পরবর্তী সময়ে স্তন্যদান করলে মায়ের শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।[১]
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কী করবেন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি জটিল সমস্যা। এ রোগে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন রুস্তাক জেনারেল হাসপাতাল, ওমান-এর স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হোসনে আরা।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : ডায়াবেটিস মানে রক্তের শর্করার আধিক্য। ডায়াবেটিস হলে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। যাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়, তাঁদের সন্তানধারণের সম্পূর্ণ সময়টা সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া যাঁদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের সন্তান গ্রহণের সময়ও সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। এসব ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে এবং প্রসব (ডেলিভারি) অবশ্যই হাসপাতালেই করতে হবে।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কী কী ধরন রয়েছে?
উত্তর : সাধারণত গর্ভাবস্থায় তিন ধরনের ডায়াবেটিস হয়। এক. রোগীর হয়তো আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং সে ইনসুলিননির্ভর। অর্থাৎ তাঁকে ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা করতে হয়। তাঁর শরীরের পেনক্রিয়েজ হয়তো ইনসুলিন উৎপাদন করে না। পেনক্রিয়েজে উৎপাদিত ইনসুলিন রক্তের শর্করা মেটাবলিজমে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
দুই. এসব রোগী সাধারণত মোটা হয়। এদের হয়তো পেনক্রিয়েজের মাধ্যমে ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু রক্তে ইনসুলিনের চাহিদা মেটায় না। অর্থাৎ তাঁদের রক্তে শর্করার আধিক্য থাকে।
তিন. সাধারণত নারীটির ডায়াবেটিস থাকে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়। তাকে বলা হয় জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। এটি ডেলিভারি হলে থাকে না। তবে পরবর্তী গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া যদি সে খাবার নিয়ন্ত্রণ না করে, জীবন-যাপন পরিবর্তন না করে তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় একজন নারী কীভাবে বুঝবেন তিনি ডায়াবেটিস আক্রান্ত?
উত্তর : এদের তেমন কোনো আলাদা লক্ষণ থাকে না। সাধারণত ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোই থাকে। ক্ষুধা বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীর ইতিহাস জানেন। এ ছাড়া আগে শিশু জন্মানোর সময় ডায়াবেটিস ছিল কি না সেটি জানা হয়। আগের শিশু চার বা সাড়ে চার কেজির ওপরে ছিল কিনা, আগে যদি স্টিলবার্থ (মৃত শিশু প্রসব) হয়, অথবা তাঁর শরীরের সূচক ত্রিশের ওপরে আছে কি না—এসব তথ্য জানা হয়। এসব ক্ষেত্রে ওজিটিটি পরীক্ষা করানো হয়। শিশু গর্ভে আসার প্রায় ২০ সপ্তাহের মধ্যে এটি করানো হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে পুনরায় করা লাগে। ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকরা কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : যদি প্রথম দুই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে গর্ভধারণপূর্ব আলাপ করে নিতে হবে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়াবেটিস আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরে গর্ভধারণ করতে হবে। যদি ডায়াবেটিসের পরিমাণ ৬-এর নিচে হয় তবে বাচ্চা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে শিশু অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে শিশু ও মা উভয়ের ক্ষতি হবে। শিশু স্বাভাবিকের থেকে একটু বড় হয়ে জন্ম নিতে পারে। জন্মের পর শিশুর শরীরে শর্করার পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই এসব সমস্যা রোধে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সন্তানসম্ভবা মায়ের ক্ষেত্রে নিয়মিত চেকআপটি কেমন হয়?
উত্তর : তাদের ক্ষেত্রে ২৮ সপ্তাহের পর থেকে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় দিনে ছয়বার পরীক্ষা করতে হবে। সকালে খাবারের আগে এবং খাবারের পরে। দুপুরে খাবারের আগে এবং খাবারের পরে। রাতে খাবারের আগে এবং খাবারের পরে এই পরীক্ষা করতে হবে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস শুধু ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। পাশাপাশি হয়তো কিছু মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সন্তানসম্ভবা মা কীভাবে নিজেকে সাহায্য করবে? কীভাবে তাঁর পরিবার তাঁকে যত্ন নিতে পারে?
উত্তর : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডায়েট মেনে চলা উচিত। যেসব খাবার ধীরে ধীরে হজম হয়ে শর্করা বাড়ায়, সেসব খাবার খাওয়া উচিত। চিনি ক্যান্ডি, যা দ্রুত রক্তের শর্করাকে বাড়িয়ে দেয় এসব খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এসব ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : ডেলিভারির সময় কি আলাদা কোনো সতর্কতা নিতে হবে?
উত্তর : এসব রোগে শেষের দিকে শিশুটি মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সব সময় চেকআপের ভেতর থাকতে হবে। আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ৩৮ সপ্তাহের আগেই ডেলিভারি করা হয়ে থাকে।
তবে আগে প্রসব করালে শিশুটির কিছু সমস্যা হতে পারে। এটাকে মেনে নিতে হবে এবং শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।[২]
অঘটন এড়াতে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের এই ৫টি ধাপ মেনে চলুন।
মাতৃত্ব একটামেয়ের জীবন কি পূর্ণতা দান করে। পৃথিবীতে এমন মেয়ে হয়ত খুঁজেপাওয়া যাবে না, যে মা হতে চায় না। আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকনে, তাহলে আপনি অবশ্যইচাইবেন মা হতে।
কিন্তু,নিরাপদ মাতৃত্বের পথটাকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে দিতে পারে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস।আর যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে তো বাচ্চা নেবার আগ থেকেইসাবধান হতে হয়।
প্রেগন্যান্সিডায়াবেটিস কি প্রতিরোধ করা যায়?
আপনি প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস হওয়া নিশ্চিতভাবে ঠেকাতে পারবেননা, তবে এটি হবার ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনি এই কাজগুলো করতে পারেনঃ
১. গর্ভধারণের আগেই বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলা
২. ব্যালান্সড ডায়েট খাওয়া
৩. নিয়মিত হাঁটা ইত্যাদি
কীভাবেপ্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন
নিয়মিত চেকআপ: আপনি ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে প্রতিদিনসুগার লেভেল চেক করুন। বাসায় বসেই এটি করার ইকুইপমেন্ট পাওয়া যায় অথবা বাসার একদমকাছে কোন ঔষধের দোকান বা ক্লিনিক থেকেও চেক করতে পারেন।
নিয়মিত চেকআপ-এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে ডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণে আপনি যা কিছু করছেন তা কার্যকর হচ্ছে কিনা। এতে করে আরো সাবধান হবারপ্রয়োজন থাকলে তা আগে থেকেই বুঝে যাবেন।
আর যদি আপনি প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নাও হয়েথাকেন, তবুও সপ্তাহে একবার করে ব্লাড সুগার চেক করুন এবং নিচের লক্ষণগুলোর কথাখেয়াল রাখুন।
১. অতিরিক্ত ক্লান্তি
২. মুখের ভেতর শুষ্কভাব অনুভব করা
৩. স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পিপাসা পাওয়া
৪. বারবার প্রস্রাব হওয়া
৫. ইনফেকশন সহজে না সারা, অথবা বারবার হওয়া
৬. চোখে ঘোলাটে দেখতে পাওয়া
মনে রাখবেন, সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিকভাবেসমস্যা নির্ণয় করা।
যা কিছু খেতেপারবেন: ডায়াবেটিস মানেই আপনি শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করেদেবেন তা নয়। শর্করা জাতীয় খাবার ছাড়া মানুষ চলতে পারেনা, আর গর্ভাবস্থায় তো আরোপারবেন না। তবে শর্করার মধ্যেও ভাল-মন্দ দুই ধরণেরই আছে। এছাড়া ব্যালান্সড ডায়েটকরতে গেলে শর্করার পাশাপাশি আপনাকে আমিষ, সব্জি, এবং ফলমুলও যোগ করতে হবে
আপনার ডায়েটে আজ থেকেই যোগ করুন
১. আটার রুটি (লাল আটা হলে ভাল)
২. ভালভাবে সিদ্ধ করা ডিমের সাদা অংশ
৩. ছোলা সেদ্ধ
৪. কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম ইত্যাদি
৫. মাছ এবং মুরগি (ভালভাবে সিদ্ধ করে রান্না করা)
৬. মেথি ডাল
৭. টকদই
৮. শাক ও সব্জি
৯. ফলমুল
১০. নন ফ্যাট মিল্ক
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমরা এখানে ডায়াবেটিক রোগিদের জন্য কিছুভাল খাবারের কথা উল্লেখ করেছি মাত্র। একজন পুস্টি বিশেষজ্ঞই পারেন আপনার উচ্চতা,ওজন, জীবন-যাপনের ধরণ ইত্যাদি বিস্লেষণ করে খাবারের পরিমাণ এবং আর কি খাবেন বা বাদদেবেন তা নির্ধারণ করে দিতে।
যা কিছু খাওয়াবন্ধ করবেন: ১. সাদা চালের ভাত (একদম না পারলে অল্প করে লালচালের ভাত খাবেন)।
২. পাউরুটি (প্রসেসড ফুড ভাল নয়, স্পেশালিপ্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিক অবস্থায়)
৩. ফ্রুট ড্রিঙ্ক/জুস [১০০ গ্রাম ফলের চেয়ে ১০০গ্রাম জুসে শর্করা অনেক বেশি]
৪. ফাস্ট ফুড
৫. গরু-খাসীর মাংস অথবা চিংড়ি ভুনা
৬. খাবারে বাড়তি লবণ
৭. চিনি দিয়ে তৈরি যেকোনও খাবার (মিস্টি, শেমাই,পায়েস, কেক, ইত্যাদি)
৮. অপাস্তুরিত দুধ (যা সরাসরি খামার থেকে দিয়েযায়)
চা খাবার অভ্যাস থাকলে তাদিনে ২ কাপের বেশি না, এবং অবশ্যই চিনি ছাড়া। তবে বাংলাদেশে জন্মে মিস্টি স্বাদ তোএকবারে ছেড়ে দেয়া যায় না। তাই চিনির বিকল্প যেমন ZeroCal ব্যবহার করতেপারেন। এটি আপনার পাশের ফার্মেসি ও জেনারেল স্টোরেই পাবেন।
খাবারের টাইমিং: প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এমনিতেই সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকঅস্বস্তি লাগে, আর ডায়াবেটিস থাকলে এটি আরও বেড়ে যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠারসাথে সাথেই সল্ট বিস্কুট/ক্র্যাকারস ইত্যাদি খেয়ে নেবেন।
সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবারের মাঝে (টি টাইম) এ একটাআপেল/কমলা/পেয়ারা খেয়ে নেবেন। বিকালে ছোলা সেদ্ধ খেতে পারেন। প্রতিবেলার খাবারটাইম মত খাবেন এবং কোন বেলার খাবার বাদ দেবেন না। না খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাআরো জটিল হয়ে পড়ে।
হাল্কা এক্সারসাইজ: মনে রাখবেন, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আপনি কোন ভারী ব্যায়ামকরতে পারবেন না। তবে হাটাহাটি, সাতার কাটা ইত্যাদি করতে পারেন। বাইরে গিয়ে হাটাঅসুবিধা হলে বাসায় জগিং অথবা সাইক্লিং মেশিন কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তবেএক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে নিজের ওপর অতিরিক্ত ধকল না পড়ে।
নিয়মিত হাল্কা এক্সারসাইজ আপনার শরীরের বাড়তি ক্যালরি কমরাখতে সাহায্য করবে। তবে নিচের এই অবস্থাগুলো আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেএক্সারসাইজ করার আগে আপনার গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ
১. রক্তপাত হওয়া
২. আগে এক/একাধিকবার মিসক্যারিজ(গর্ভপাত)
৩. আগে প্রি-ম্যাচিউরড ডেলিভারি হয়েছে
পরিশিষ্ট: প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস বাংলাদেশে একটু বেশিই কমন ব্যাপার,এটা আপনার গাইনি ডাক্তারের কাছেও শুনেছেন হয়তো। তবুও প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস নিয়েজানার অভাবে অনেক মায়েরা এটাকে অবহেলা করেন। ভাবেন “বাচ্চা হবার পর তো চলেই যাবে”।
এই অবহেলা গর্ভবতী এবং গর্ভের সন্তান উভয়ের জন্যই মারাত্নকবিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে আপনি যদি সচেতন হয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাহলেআপনার নিরাপদে মা হবার স্বপ্ন বাস্তবে আসার পথে এটি কোন বাধা হয়ে দাড়াবেনা।
আরেকটি কথা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য যে লাইফস্টাইল ওখাবার বেছে নিচ্ছেন, তা প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস ভাল হয়ে যাবার পরেও কন্টিনিউকরুন। এতে আপনি সবসময়ই সুস্থ্য ও সতেজ থাকবেন।[৩]
ডায়াবেটিক নারীদের মা হওয়ার প্রস্তুতি
গর্ভকালীন ২ থেকে ৫ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। এঁদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ মা গর্ভজনিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ মা গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।
যেসব ডায়াবেটিক নারী সন্তান ধারণ করতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা ও সঠিক পূর্বপ্রস্তুতি। কেননা, ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতা যেমন রেটিনা-কিডনি-স্নায়ু-রক্তনালির রোগ গর্ভকালীন জটিলতর হতে পারে। যাঁদের শর্করা নিয়ন্ত্রিত নয়, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকি বেশি। যেমন: গর্ভপাত, প্রি-একলাম্পসিয়া, মেয়াদের আগেই প্রসব ইত্যাদি। মায়ের রক্তে উচ্চ শর্করা গর্ভের শিশুর বিভিন্ন ক্ষতি ঘটাতে পারে, যেমন: গর্ভে মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা, স্থূলতা, প্রসবকালীন বিভিন্ন আঘাত ইত্যাদি।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণের প্রস্তুতি কমপক্ষে তিন মাস আগে শুরু করা জরুরি।
মানসিক প্রস্তুতি: সন্তান ধারণের পরিকল্পনার সময়ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রত্যেক মা এবং তাঁর পরিবারের সবার বিস্তারিত ও সঠিকভাবে জেনে নেওয়া উচিত যে কীভাবে ডায়াবেটিস ও গর্ভধারণ একে অপরকে প্রভাবিত করে, কী কী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এবং তা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় কী।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস: সন্তান ধারণের আগে থেকেই শর্করা নিয়ন্ত্রণে সুষম কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন। গর্ভধারণ পরিকল্পনা শুরু থেকে গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ মিলিগ্রাম ফলিত অ্যাসিড ট্যাবলেট সেবন করুন, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা প্রতিরোধে উপকারী। রক্তশূন্যতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক ওজন: গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা এড়াতে সঠিক ওজনে আসুন। যাঁদের বিএমআই ২৭ বা তার বেশি, তাঁদের ওজন কমানো জরুরি।
শর্করা নিয়ন্ত্রণ: বাড়িতে নিয়মিত খাওয়ার আগে ও দুই ঘণ্টা পর রক্তের শর্করা মাপুন এবং এগুলো যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫ এবং ৮ দশমিক ৫-এর নিচে রাখুন। গড় এইচবিএ১সি ৬ দশমিক ৫-এর নিচে অর্জন করুন। শর্করার সঠিক মাত্রা অর্জন করতে গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে মুখে খাওয়ার ওষুধ পরিবর্তন করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করুন।
আনুষঙ্গিক ওষুধ: যাঁরা উচ্চরক্তচাপের জন্য থায়াজিড এআরবি-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাঁরা গর্ভধারণের আগেই এগুলো পাল্টে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।
গর্ভধারণের সময় রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতা: গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিসজনিত রেটিনার জটিলতা, কিডনি জটিলতা, বিভিন্ন রক্তনালির রোগ আছে কি না, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন। কেননা, গর্ভকালীন এসব বেড়ে যেতে পারে। ধূমপান বা অ্যালকহল অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ: কিডনির জটিলতা অর্থাৎ রক্তে ক্রিয়েটিনিন ২ মিলিগ্রাম বা তার বেশি, সিসিআর ৪৫ মিলি/মিনিট-এর কম, প্রস্রাবে আমিষের পরিমাণ দিনে ২ গ্রাম বা তার বেশি, রেটিনা জটিলতার সর্বোচ্চ ধাপ, রক্তনালিজনিত হূদেরাগ, এইচবিএ১সি ১০ শতাংশ বা তার বেশি—এই সব ক্ষেত্রে গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।[৪]
[১] ইসরাত জাহান পুষ্টিবিদ বিআরবি হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা
[২] ডা.হোসনে আরা রুস্তাক জেনারেল হাসপাতাল, ওমান-এর স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ
[৩] অনলাইন ডেস্ক
[৪] ডা. নাজমুল কবীর কোরেশী মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
কমেন্টস করুন