এমন অনেকেই আছেন, যারা নিজেদের চেহারার দিকে একেবারে নজর না দেওয়ার ফলে যত দিন যাচ্ছে চেহারা মোটা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়াও যে খুব ভালো লক্ষণ নয়।
তবে ওজন কমানোর জন্য নিজেকে তো একটু পরিশ্রম করতেই হবে। জিমে যাওয়ার সময় না থাকলে বাড়িতে বসেই আপনি এই ৩টি যোগাসন করেই দেখুন। তা হলে কী কী যোগাসন করবেন আসুন জেনে নিই।
১. ধনুরাসন:
প্রথমেই শরীর উপুর করে শুয়ে পড়ুন। এ বারে হাত দিয়ে পা দুটিকে শক্ত করে ধরুন এবং টেনে, মেরুদণ্ডের ওপর পর্যন্ত নেওয়ার চেষ্টা করুন। যেন আপনার সমগ্র শরীরটা, আপনার তলপেটের ওপরে থাকে।
এরপর পা দু’টিকে, হাতের সাহায্যে ১০ ইঞ্চি ফাঁকা করুন এবং স্বাভাবিকভাবে দম নিন আর ছাড়ুন। ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এরপরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এইভাবে ৪বার আসনটি করুন।
এই আসনটি নিয়মিত অভ্যাসে আপনার পেটের ও কোমরের চর্বি দ্রুত কমবে।
২. পশ্চিমোত্তানাসন:
হাত দু’টি মাথার ওপর লম্বালম্বিভাবে রেখে প্রথমেই, চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এইবার কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পা দু’টি সোজা রেখে, কোমর থেকে দেহের ওপরের অংশ, দম নিন এবং মাটি থেকে তুলে হাতের আঙুল দিয়ে দু’পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ধরুন ও দম ছাড়ুন।
এখন সামনের দিকে আরো ঝুঁকে কপাল ও মুখ হাটুতে ঠেকান। এরই সঙ্গে হাত দু’টি, কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে, কনুই দু’টি মাটিতে স্পর্শ করুন।
এই আসনটি অভ্যাসের সময় যাতে নিজের হাঁটু দু’টি মাটিতে স্পর্শ করে থাকে সে দিকে খেয়াল রাখুন।
৩. উত্থিত পদ্মাসন
প্রথমে পা দু’টিকে সামনের দিকে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এ বার ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে ভাঙুন। যাতে ডান পায়ের গোড়ালি বাঁ দিকের কুচকি স্পর্শ করে।
একই ভাবে আপনার বা পায়ের অবস্থান পরিবর্তন করুন এবং খেয়াল রাখুন যাতে আপনার বা-পায়ের গোড়ালি ডান দিকের কুচকি স্পর্শ করে। এখন দম নিতে নিতে দু’হাতের চেটোর ওপর দেহের ওজন রেখে, যতদূর সম্ভব নিজের শরীর-টাকে উপরের দিকে তুলুন।[১]
যোগাসনের উপকারিতা
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রভাত ভাবতে থাকে সারা দিন সবার জন্য অনেক কাজ করা হয় কিন্তু নিজের জন্য আলাদাভাবে কিছুই করা হয়ে ওঠে না। কাজের চাপে ঘুমটাও ঠিকমতো হয়ে ওঠে না। আর সময়ের অভাবে নিজের যত্ন না নেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রাণচঞ্চল ছেলেটি ধীরে ধীরে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রভাত আয়না দেখে আর ভাবে, কীভাবে পারবে নিজেকে আগের মতো প্রাণবন্ত করে তুলতে?
প্রভাতের মতো আমরা অনেকেই ব্যস্ততার অজুহাতে নিজের যত্ন নিই না। তাদের জন্য সহজ সমাধান হতে পারে যোগাব্যায়াম বা যোগাসন। যোগাসন শব্দের ইংরাজি নাম Yoga, যার অর্থ যোগ করা বা একত্র করা। ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তা একত্র করে প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যম হলো, যোগ বা যোগাসন।
১. শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
২. শরীরে জমে থাকা বিষ (টক্সিন) দূর করতে যোগাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. যোগাসন আমাদের পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ—যেমন পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, যকৃৎ কার্যকর করে। ফলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৪. চাপ দূর করতে যোগাসনের বিকল্প নেই।
৫. শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে যোগাসন, যার ফলে অভ্যন্তরীণ শক্তিপ্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে আমরা কর্ম–উদ্যমী হয়ে উঠি।
৬. শরীর মন ও আত্মার একত্রকরণের মাধ্যমে যোগাসন কোনো একটি বিষয়ের প্রতি একাগ্রতা আনতে সহায়তা করে।
৭. মনের চঞ্চলতা কমায়, ধৈর্যশক্তি বাড়ায়।
৮. মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে, নারীদের ডিম্বাশয় ভালো থাকে। ফলে প্রজননক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৯. যোগাসন বিচলিত–বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এতে চিন্তা করার দক্ষতা বাড়ে এবং আমরা সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারি।
যোগাসন করার সময়
অনেকেই চিন্তা করেন এই ব্যস্ততাময় জীবনে সময় কোথায় যোগাসনের, তাঁদের জন্য বলছি। খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টার মধ্য ব্যতীত দিনের যেকোনো সময় যোগাসন করা যেতে পারে। যোগবিজ্ঞান অনুসারে বলা যায় যে সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে যখন প্রকৃতি থাকে শান্ত, পরিশুদ্ধ এবং আমাদের অন্ত্র, পাকস্থলী সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে, তখন যোগাসনের জন্য উপযুক্ত সময়। প্রকৃতির এই অফুরান প্রাণশক্তি আমাদের অবচেতন মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্য আমরা একটি সুন্দর দিন শুরু করতে পারি। সময়ের অভাবে যোগাসন থেকে বিরত না থেকে আমরা যদি আমাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু অনুশীলন করি, তবে সারা দিন প্রাণবন্ত থাকা যাবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১. যোগাসন অনুশীলনের জন্য কোনো বয়সসীমা নাই, যেকোনো বয়সের নারী–পুরুষ যোগাসন করতে পারেন। তবে একা একা অনুশীলন না করে কোনো দক্ষ প্রশিক্ষকের সহায়তা নেওয়া ভালো।
২. গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম অনুশীলন খুবই উপকারী। তবে অনুশীলনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. শরীরের ওপর অতিরিক্ত জোর দিয়ে অথবা শরীরে ব্যথা নিয়ে যোগাসন চর্চা করা ঠিক না, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. যোগাসন অনুশীলনের জন্য জায়গাটি হবে এমন—যেখানে অবাধে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। আবার ঘরের বাইরেও অনুশীলন করা যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে পরিবেশটি যেন কোলাহলমুক্ত মনোরম হয়। খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা জায়গায় যোগাসন অনুশীলন করা ঠিক না।
৫. যোগাসনের জন্য ম্যাট ব্যবহার করা ভালো। ম্যাট না থাকলে মোটা কাপড়, কাঁথা বা কম্বল ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, ম্যাট বা জায়গাটি যেন পিচ্ছিল না হয়।
৬. যোগাসন চর্চার আগে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যেতে পারে। এতে শরীর ও মন সতেজ থাকবে।
৭. যোগাসনের পোশাক হবে হালকা এবং আরামদায়ক। অনুশীলনের সময় চশমা, ঘড়ি খুলে রাখতে হবে।
৮. যোগাসন অনুশীলন করার জন্য শুধু নিরামিষ খাবার খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে পরিমিত ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।
৯. যোগাসন অনুশীলনের সময় বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি আসনের মধ্যে বিশ্রাম নিতে হবে।
১০. যোগাসনের উপকারিতা এক দিনে পাওয়া যাবে না। নিয়মিত বুঝে ও জেনে প্রয়োজন অনুযায়ী আসনগুলো অনুশীলন করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে।[২]
নিয়মিত কিছু যোগাসনে ভাল থাকুন
যোগাসনের উৎপত্তি ভোলা মহেশ্বর অর্থাৎ শিব ঠাকুরের হাতে তা কি জানেন? যোগ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে শিব ঠাকুর প্রায় ৮৪ লক্ষ যোগাসনের উদ্ভাবন করেছেন। এদের মধ্যে মানুষের উপযোগী আসনের সংখ্যা মাত্র ৮৪ টি। এর মধ্যে কয়েকটি আসনকে বেছে নিলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও যেমন বাড়বে একইসঙ্গে মানসিক চাপকে বশেও রাখা যায় আর ভালও থাকা যায়।
উত্থানপদাসন: চিৎ হয়ে শুয়ে দুহাত শরীরের দুপাশে রাখুন। দুই পা একসঙ্গে জোড়া ও সোজা করে মাটি থেকে এক হাত উপরে তুলুন। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিতে নিতে বিশ থেকে তিরিশ গুনুন। এই ভাবে তিনবার করতে হবে। এই আসনটি করার সময় লক্ষ্য করবেন পেটে বেশ চাপ পড়ছে। আসলে এতে পেটের পেশী মজবুত হয়। পেটের মেদ ঝড়াতে এই আসন অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আমাশয় ও গ্যাস্ট্রারাইটিসের ক্ষেত্রেও উপযোগী।
পবনমুক্তাসন: চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে পেত ও বুকের ওপর রেখে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে চেপে ধরুন। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে কুড়ি পর্যন্ত গুনতে হবে। একই ভাবে বাঁ পা ও পরে দুই পা একত্রে পেটের ওপর রেখে আসনটি করুন। পেটের বাড়তি চর্বি ঝড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পেট ফাঁপা, গ্যাস, অম্বল, হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যেও এই পবনমুক্ত আসন খুব উপকারি।
সুপ্ত বজ্রাসন: মাটিতে হাঁটু মুড়ে বজ্রাসনে বসুন। এইবার পেছন দিকে ধীরে ধীরে সুয়ে পড়ুন। দুহাত সোজা রেখে মাথার দুপাশে আনুন। এরপর দুহাত কনুই থেকে ভাঁজ করে ডান হাতের চেটো দিয়ে ডান কনুই ধরুন। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে মনে মনে বিশ পর্যন্ত গুনুন। এরপর শবাসনে বিশ্রাম নিন। তিনবার অভ্যাস করুন। থলথলে ঊরু ও পেট টোন করতে এই আসনটি অত্যন্ত কার্যকর। এমনকি হজমের গোলমাল থাকলেও তা দূর করে খিদে বাড়ায়।
অর্ধকূর্মাসন: মাটিতে বজ্রাসনে বসুন। এইবার হাত দুটি সোজা করে মাথার ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জড়ো করুন। পেট ও বুক যেন ঊরুর মঙ্গে লেগে থাকে। এই অবস্থায় মনেমনে বিশ পর্যন্ত গুনুন। ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে শবাসনে বিশ্রাম নিন। এই ভাবে তিনবার অভ্যাস করতে হবে। পেট ও নিতম্বের চর্বি কমাতে এই আসনটি অত্যন্ত উপযোগী।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে যোগাসন
বয়স বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি ত্বকের বার্ধক্যতা। শরীরের গড়ন, ত্বকের উজ্জ্বলতা, ফিটনেস সবকিছু একদম আগের মতো ধরে রাখতে চাই ব্যায়াম। বেশিরভাগ সেলিব্রেটিই নিয়মিত যোগাসন করেন এবং প্রত্যেকেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, সুস্থ শরীর ও গ্লোয়িং ত্বকের গোপন রহস্য এই যোগাসন। রইল টিপস…
১. প্রথমে মেঝেতে পা দুটো সোজা করে বসুন। তারপর পা দুটো একটু ফাঁক করে ডান হাত দিয়ে ডানদিকের পা মুড়িয়ে রাখুন বাঁ দিকের থাইয়ে। তারপর বাঁ হাত দিয়ে বাঁ দিকের পা মুড়িয়ে রাখুন ডানদিকের থাইয়ে। এবার হাত দুটো থাকবে দুটো হাঁটুর ওপর। চাইলে যে কোনো মুদ্রাও হাতে করতে পারেন। এভাবে ৫ মিনিট বসুন। ধীরে ধীরে গভীরে শ্বাস নিন ও শ্বাস ছাড়ুন। একদম সোজাভাবে বসবেন। পিঠ সোজা রাখবেন।
২. প্রথমে মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে হাত রাখুন কোমরের পাশে। তারপর হাত মাটিতে রেখে পা উপরে তুলুন। পা একদম সোজা তুলে দিন। হাত মাটিতেই থাকবে। তারপর হাতের ওপর ভর দিয়ে, পা মাথার দিকে ধীরে ধীরে নিয়ে হাত দুটো দিয়ে কোমর ধরুন। কোমরও উপরে উঠবে। পায়ের পাতা একদম মাথার পেছন দিকে গিয়ে ঠেকবে। এভাবে পা যত উপরে তুলবেন কোমরও উঠবে। আর তখনই হাত দিয়ে কোমর ধরবেন। দীর্ঘ শ্বাস নিন। তারপর ধীরে ধীরে প্রথমে কোমর নামবে। তারপর পা দুটো নামান। কোমর নামানোর সময় ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এটা ধীরে ধীরে করবেন। কোনো তাড়াহুড়ো নয়।
৩. মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর পা দুটো একটু ফাঁক করে রাখুন। হাত দুটোও একটু ছড়িয়ে রাখুন। চোখ বন্ধ করুন। আর ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও শ্বাস ছাড়ুন। শরীর ও মনকে পুরোপুরি রিলাক্স দিন। ১০ থেকে ১২ মিনিট এভাবে শুয়ে থাকুন। এটা খুব সহজ আসন তাই যে কেউ করতে পারে। সমস্যা নেই।
যোগাসনের চর্চা
সুপ্রাচীন কাল থেকে ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব স্বাস্থ্য বিজ্ঞান হচ্ছে যোগব্যায়াম। হাজার হাজার বছর পেরিয়ে আজ পর্যন্ত যোগব্যায়াম একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। যোগব্যায়ামে শরীরের ক্ষয় হয় না বলে অতিরিক্ত খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে না। যোগব্যায়াম একমাত্র ব্যায়াম যা একই সঙ্গে শরীর ও মন গঠন করে। প্রধানত যোগব্যায়াম তিন প্রকারঃ হঠযোগ: হঠযোগ দ্বারা শরীরের পেশী ও সন্ধিস্থলসমূহকে সুস্থ রাখে। প্রাণায়াম, মুদ্রা, ধৌঢি: শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, ধ্যান যোগ বা রাজযোগ:ধ্যান যোগ দ্বারা যোগাসনের মূল দর্শনকে অনুশীলন করা হয়। যোগাদশ হচ্ছে জীবআত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সঙ্গে মিলন ঘটানো। বা পরমে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া। যোগাদর্শে স্বর্গ নরকের বিষয় নেই। জীব জন্মগতভাবেই বিভিন্ন রিপুতাড়িত ব্যাধিদ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই জীবকে পরমাত্মার সঙ্গে মিলন উপযোগী করতে নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন অপরিহার্য, এই অনুশীলনের মাধ্যমে জীবাত্মা ধীরে ধীরে রিপুর ব্যাধি থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করবেন। তারপর তিনি পূর্ণআত্মা প্রাপ্ত হবেন। তারপর তিনি পরম দর্শনে, মিলনে নিজেকে বিলীন করবেন। যোগাসনের আরো অনেক শাখা-প্রশাখা আছে লয় যোগ, শাংখো যোগ ইত্যাদি;। যোগব্যায়ামকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্ব মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। জাতিসংঘ থেকে বিশ্ব যোগব্যায়াম দিবস প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২১ জুন বিশ্ব যোগব্যায়াম দিবস হিসেবে পালিত হয়। জনাব মোদী ব্যক্তিগত জীবনে যোগব্যায়াম অনুশীলন করেন এবং তার দেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগঅনুশীলন বাধ্যতামূলক করেছেন। আমি একজন অতি সাধারণ যোগী হিসেবে মান্যবর নরেন্দ্র মোদীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বর্তমান যুগে বিশ্বায়নের বহুমাত্রিক প্রযুক্তি ও যান্ত্রিকার সঙ্গে সংযুক্ত জীবন যাপনে চাপে মনোজাগতিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি অন্যতম উপায় হতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করা, সকালে খাবার আগে বা রাতে খাবার আগে ১৫/২০ মিনিট যোগব্যায়াম করে নিলে শরীরের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি হয়। ফলে ক্লান্তি বা অবসন্নতা কখনও গ্রাস করতে পারে না ব্যক্তিকে। উপরন্তু নিয়মিত যোগঅনুশীলন করলে কখনই হতাশাগ্রস্ত হবে না ব্যক্তি। যোগব্যায়াম করার জন্য সুতি ও একটু ঢিলেঢালা বস্ত্রাদি পরিধান করা ভালো। গান শুনতে শুনতে বা আয়নায় নিজেকে দেখতে-দেখতে যোগব্যায়াম করা যাবে না। দুপুরে যোগব্যায়াম নিষিদ্ধ। খাবার খাওয়ার ১০/১৫ মিনিট আগে ব্যায়াম করলে সঠিক, আবার খাবার খেয়ে ফেলেছেন এখন ন্যূনতম দুই ঘণ্টা পরে আসন করতে পারবেন। ফ্লোরের মধ্যে সতরঞ্জি বিছিয়ে বা মোটা কাপড় বিছিয়ে ব্যায়াম করবেন। মোটামুটি আলো বাতাস আছে এমন স্থানে। ১২ বছর বয়স পূর্ণ না হলে প্রাণায়াম মুদ্রা করা যাবে না। নারীদের ঋতুকালীন সময় আসন করা যাবে না। মারাত্মক ব্যাধি আক্রান্ত অবস্থায় যোগাসন নিষিদ্ধ, অধ্যয়ন না করে অনুশীলন করা যায় না। তাই যোগাসনের গ্রন্থ পাঠ করে বা মোন সঠিক যোগীর কাছে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর অনুশীলন করুন। সুস্থ সবল নাগরিক নিজেকে উন্নীত করণের মাধ্যমে ও দেশে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। অসুস্থ নাগরিক দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় মহল্লায় মহল্লায় ব্যায়ামাগার ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগাটি এখন আর নেই, অথচ ছাত্র জীবনে জীবন সচেতন করতে নিয়মিত ব্যায়ামে উত্সাহিত করা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরুরি বিষয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ-ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে একাধিক ছেলেদের ও মেয়েদের ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠা করুন। সেই সঙ্গে মনে পড়ে বুড়ীগঙ্গা নদীর পারে সদরঘাটে নবযুগ ব্যায়ামাগারের কথা, এখন সেখানে ব্যায়ামাগারটি নেই গড়ে উঠেছে মার্কেট।
সেই রকম নাজিরাবাজারের ব্যায়ামগারটি বিলুপ্ত বা অতি বা অতিসংক্ষিপ্ত হয়েছে কি না জানি না। আজকের নাগরিক জীবনে সুস্বাস্থ্য বিবেচনা করে নগর পরিকল্পনায় প্রতিটি মহল্লায় বা ওয়ার্ডে একটি খেলার মাঠ একটি গ্রন্থাগার ও একটি ব্যায়ামাগার সংযুক্ত করা জরুরি। সারাদেশে এই পরিকল্পনা গৃহীত হলে দশ বছরের মধ্যে সুস্বাস্থ্যবান জনগোষ্ঠী বিকাশ লাভ করতে পারে। রোগামনে শারীরিক যে প্রভাব পড়ে তা হচ্ছে বিস্মকর ব্যাপার। শরীরের অণুর কালচক্রে উল্টো পথে ধাবিত করে। এই ক্রম পরিবর্তন ধারাটি দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। ফলে সে চির যৌবন প্রাপ্ত থাকতে পারেন। অর্থাত্ নিজেকে ব্যাধিমুক্ত রাখতে পারেন। আমি যোগাদর্শের কাছে চিরঋণী। প্রায় ৩৬/৩৭ বছর ধরে আমি নিয়মিত যোগ অনুশীলন করে আসছি। আমার চুল দাড়ি গোঁফ অনেক পেকে গিয়েছিল এখন কাঁচা চুল বের হচ্ছে। একাধিক দাড়ি গজাচ্ছে। কানের ভেতর পচন ধরে ছিল। নাক দিয়ে রক্ত পুঁজ পচা মাংসে ক্ষুদ্রাংশ হতো। যোগ অনুশীলন করে আর বাংলার বনৌষধি সেবন করে ভালো হয়েছি। একাধিকবার সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি যোগ অনুশীলন করে নিজেকে ভালো করেছি। সর্বোপরি প্রিয় দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রতিদিন আহার করেন, প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। যোগব্যায়াম করতে হবে এমন কথা নয়। আপনার ভালো লাগে যে কোনো ব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলুন একান্ত কিছু সম্ভব না হলে স্কুলে যে পিটি করতেন সেই অভ্যাস পরিবারে চালু করুন। ওষুধনির্ভর পরিবার ও ব্যক্তি সকল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক প্রাচীন ধর্ম ব-দ্বীপের এই রত্ন ভাণ্ডারকে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতির অংশ করে নিয়েছে।[৩]
[১] ডিএইচডি [২] কাজী রুমানা হক যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর ও প্রভাষক [৩] ভাস্কর রাসা
কমেন্টস করুন