এন্ডোমেট্রিওসিসের অন্যতম হলো উপসর্গ ব্যথা। এতে তলপেট, পিঠ, কোমর অর্থাৎ পেলভিক অঞ্চলে প্রচন্ড ব্যথা হয়। পিরিয়ড শুরুর আগে ও পিরিয়ডের সময় এ ব্যথা শুরু হয়, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং ছাড়াও মাসের অন্য সময় একই ধরনের ব্যথা, ক্লান্তি, খিটখিটে ভাব, বিরক্তি, সন্তানহীনতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। অ্যান্ডোমেট্রিওসিসে সব সময় ব্যথা হয়। এ ছাড়া মলত্যাগ ও প্রস্রাবের সময়, এমনকি ইন্টারকোর্সের সময়ও ব্যথা হতে পারে। কেবল ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে এ রোগ শনাক্তকরণ করা যায়। এন্ডোন্ডোমেট্রিওসিস বন্ধ্যত্বের একটি কারণ। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব।
এন্ডোমেট্রিওসিস ও আইভিএফ : এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়া মুশকিল। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আইভিএফ-এর সাহায্য নিতে হয়। প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে ফলিকিউলোজেনেসিসের বিষয়টি। এ অসুখে ওভারির সঙ্গে ফ্যালোপিয়ান টিউবের সামঞ্জস্য বিঘ্নিত হয়। অর্থাৎ ওভারি থেকে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে আসার প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ট্র্যান্স ভ্যাজাইনাল আলট্রাসনোগ্রাফি ও ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে ওভারি দুটি খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে তারপরই বন্ধ্যত্বের কী ধরনের চিকিৎসা করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোগীর বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে আইভিএফ-এর সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। রোগীর বয়স ৩৫ বছরের কম, অল্প এন্ডোমেট্রিওসিস, দুটি ফ্যালোপিয়ান টিউব মোটামুটি স্বাভাবিক- এ অবস্থায় ওটও করেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। অনেক সময় ওভারির কর্মক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সিরাম অগঐ পরীক্ষা করতে হতে পারে।
ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্টের পরামর্শ নিতেই হবে। এন্ডোমেট্রিওসিস হলে অবশ্যই শুরু থেকে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। কেননা অন্য অসুখের মতোই এ রোগটির শুরুতে চিকিৎসা করালে একদিকে যেমন জটিলতা এড়ানো যায়, অন্যদিকে কষ্টও কম হয়। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগের সূত্রপাত চাইল্ডবিয়ারিং এজ-এ, তাই প্রথম থেকেই সন্তান ধারণের কথাটা মাথায় রাখা উচিত। বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করালে পরবর্তী সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। পিরিয়ডের সমস্যা হলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা শুরু করানো আবশ্যক।
সম্পূর্ণ সারে না : ডায়াবেটিস, সোরিয়াসিস বা হাইপারটেনশনের মতো এন্ডোমেট্রিওসিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইনফার্টিলিটির চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিওসিস সার্জারির প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে বলতে গেলে বিশেষজ্ঞ সার্জনের কাছে নিপুণ সার্জারি, বিভিন্ন ওষুধ ও হরমোনের সাহায্যে একযোগে চিকিৎসায় এন্ডোমেট্রিওসিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। যদি অসহ্য ব্যথায় জীবনযাপন দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে ও ল্যাপারোস্কোপিক পরীক্ষায় শনাক্ত হয় এন্ডোমেট্রিওসিস এ কষ্টের কারণ, তবে প্রথমে বিভিন্ন ওরাল কন্ট্রাপেটিভ পিল ও অন্যান্য ওষুধের সাহায্যে রোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। ওষুধে কাজ না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। প্রয়োজনে মনোবিদ বা সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলরের সঠিক চিকিৎসা করিয়ে ভালো থাকুন।
ডা. শাহজাদা সেলিম হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
কমেন্টস করুন