এভারেস্টজয়ী নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারী বলেছিলেন, ‘আমরা এভারেস্ট জয় করি না, জয় করি নিজেকেই’।
আত্মবিশ্বাসের গুরুত্বটা আসলে এখানেই। আত্মবিশ্বাস হলো জীবনের সফলতার পথে একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি এমন একটি শক্তি, যার বলেই আমরা যে কোন অসাধ্য সাধন করতে পারি। অন্যদিকে কম আত্মসম্মান হলো এ জগতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটি বলতে আসলে বোঝানো হয়, কারো নিজের মধ্যেই প্রকৃত সন্তুষ্টির অভাব। শুধু নিম্নস্তরের লোকদেরই নয়, বরং যারা উচ্চ পদে রয়েছেন তাদের জন্যও এটি একটি বড় সমস্যা। কম আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা গালগল্প করতে বেশি পছন্দ করে। কেননা এ কাজটাই তাদের আনন্দ দেয়। অপরদিকে আত্মবিশ্বাসীরা জীবন আদর্শের কথা বলে এবং অন্যের দোষ সম্পর্কে আলোচনা করে না। তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরকে সম্মান বা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, সেইসঙ্গে অন্যের প্রতি যত্নশীলও হয়।
যাহোক, এমন অনেকেই আছেন যারা নিজের মধ্যে থাকা ‘কম আত্মসম্মান’র বিষয়টি ধরতে পারেন না। এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণই বলে দিবে আপনি নিজেকে ঠিকমতো মূল্যায়ন করতে পারছেন কিনা। এগুলো কম আত্মসম্মানের বিষয়গুলো ধরতে সাহায্য করার পাশাপাশি আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপায় খুঁজতেও সাহায্য করবে।
কম আত্মসম্মান হলো এমন একটি জটিল অবস্থা যা আপনাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরর্থক এবং অযোগ্য করে তোলে। তাই নিজের বা অন্য ব্যক্তির মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখলে বুঝে নিন এগুলোই কম আত্মসম্মানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দ্বন্দ্ব এড়ানোর চেষ্টা যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনি ঝগড়া এড়াতে চান। এমনকি আপনি যদি কোন বিষয়ের সঙ্গে একমতও না হন কিংবা কোন বিষয় বিশ্বাস করতে না পারেন তখনও কিছু বলেন না। এটাই কম আত্মসম্মানের লক্ষণ। বরং ওই পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব এড়ানোর ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে না রেখে যা মনে আসে ঝটপট বলে ফেলুন। তা না হলে পরবর্র্তীতে নিজেকে প্রকাশের সুযোগও কম পাবেন। এটি আপনাকে অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তোলার থেকেও বাধা দিবে। মানুষ জানতে পারবে না আপনি আসলে কে? আর আপনার মতামতই বা কতটা মূল্যবান? কাজেই নিজেকে আত্নবিশ্বাসী করে তুলতে সঠিক মুহূর্তে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের বিকল্প নেই।
‘দুঃখিত’ বলা যারা কম আত্মসম্মানের সমস্যায় ভোগেন তারা বিশ্বাস করেন, ভুল তারাই সবসময় বেশি করেন। এজন্য তাদের সরি বলা উচিত। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় স্ব-মূল্য সম্পর্কে অবগত থাকেন না বলেই তারা এমনটি করে থাকেন। তারা শুধু নিজেদের দোষ খুঁজে ফিরেন। কখনই নিজের প্রতিভা তাদের চোখে ধরা দেয় না। কম আত্মবিশ্বাসের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। আত্নবিশ্বাস বাড়লে পরবর্তীতে আপনি নিজে নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন আপনার ক্ষমা চাওয়াটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল। কেননা ওই পরিস্থিতিতে আপনি ভুল কিছুই করেননি।
হতাশায় ভোগা কম আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা সবসময় হতাশায় ভোগেন। তারা সামাজিক হননা, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন এবং সহজেই নতুন কিছু করতেও পারেন না। আপনার ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হয়ে থাকলে আপনি নতুন কোন শখ বাছাই করার চেষ্টা করুন, নতুন কোন জায়গায় বেড়াতে যান কিংবা নতুন কারও সঙ্গে দেখা করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তত একবার হলেও ঝুঁকি নেওয়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন, জিত আপনারই হবে।
সমালোচনায় মুখ লুকানো আড়ালে আপনাকে নিয়ে সবাই নানা সমালোচনা করে। কখনও কখনও এসব সমালোচনা আপনাকে কাঁদিয়ে ছাড়ে। এমনটি হলে বুঝবেন, আপনি কম আত্মসম্মানের সমস্যায় ভুগছেন। না হলে পিছে আপনাকে নিয়ে লোকে নানা কথা বলবে কেন? এক্ষেত্রে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কেউ আপনার সমালোচনা করলে একবার, দুইবার কিছু না বললেও তৃতীয়বার অবশ্যই আপনার রুখে দাড়ানো উচিত।
নতুন জিনিস কেনায় আনন্দ গবেষকরা বলেছেন, বস্তুবাদ ও কম আত্মসম্মানের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায়। সাধারণত কম আত্মবিশ্বাসের লোকদের একটি বস্তুগত প্রকৃতি রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, নতুন কেনা এই জিনিসগুলি তাদের সুখ এবং মঙ্গল সাধনে অবদান রাখে। এ রকম কোন বিষয় আপনার মধ্যে দেখা দিলে শপিং নয়, বরং পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
নেতিবাচক মনোভাব
নারী এবং পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কম আত্মবিশ্বাসের লক্ষণগুলো আলাদা আলাদা। পুরুষদের মধ্যে যাদের উচ্চ মানের আত্মবিশ্বাস নেই তারা সবসময় অন্যদের বিশেষ করে তার সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। তারা অত্যধিক সমালোচনা করেন এবং সবকিছুই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন। এখানেই শেষ নয়, কম আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ নিজের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিহ্নিত এবং ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে থাকেন। একইসঙ্গে নিজের আত্মত্যাগের বিষয়গুলো তিনি বারবার প্রচার করে থাকেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন কম আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নারীরা সহজে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে তারা অন্যের নেতৃত্ব অনুসরণ করতে পছন্দ করেন। তারা কোন বিষয়ে মতামত দিতে গেলেও নিজেই নিজের ত্রুটি খুঁজে পান। দ্বন্দ্ব সৃষ্টির ভয়ে তারা কখনই কোন কাজে ‘না’ বলতে পারেন না। এটাই তাদের বড় সমস্যা।
চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে চলেন নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান- এরকম একটি বিষয়ে গবেষণা করেছেন আমেরিকান পেডিয়াট্রিক একাডেমী। গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি বাচ্চারা নতুন কাজ করতে ভয় পায় অথবা এ কাজটি করা থেকে বিরত থাকে তাহলে বুঝবেন তারা হতাশা থেকে এটা করতে পারে। এটি কম আত্মসম্মানের একটি লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া বিষণ্ণতা দেখানোও আরেকটি লক্ষণ হতে পারে। তারা নিজেদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে সমাজের অন্যান্য মানুষের মতামতের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে। এসব লক্ষণের কোনটিই যদি আপনি আপনার সন্তানদের মধ্যে দেখতে পান তাহলে বুঝবেন এখনই আপনার সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার উপযুক্ত সময়।
কম আত্মসম্মানবোধ ব্যক্তিদের মধ্যে সহজেই অন্যের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এরা প্রায়ই এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্ষমা চায়। তারা গঠনমূলক সমালোচনার জন্যও ভাল নয়। আবার কম আত্মসম্মানশীল ব্যক্তিরা অন্যের সুখে বাঁধা দিতে পারে। তারা নিজের সিদ্ধান্তে অর্থবহ কোন সম্পর্কও তৈরি করতে পারেনা। আপনি যদি এই সতর্কতা চিহ্নগুলির মধ্যে কোন একটিও চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে নিজের আত্মসম্মানবোধ আরেকবার মূল্যায়ন করা জরুরি। যখন এটি করবেন, তখন নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন আপনার আরও আত্মবিশ্বাসী হওয়া কতটা জরুরি।
কমেন্টস করুন